আশির দশক কিংবা তার আগে যাদের জন্ম তাদেরকে সম্ভাবত বর্ণ পরিচয় সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই।
তবে বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা সম্ভাবত এই বইটির নামও শোনেনি। “বর্ণপরিচয়” ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত একটি বাংলা বর্ণশিক্ষার বই। বইটি দুটি খন্ডে (প্রথম ভাগ, দ্বিতীয় ভাগ) বিভক্ত। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫৫ সালের এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখ। তখনকার সময়ে দুই পয়সা মূল্যের এই ছোট্ট বইটি বাংলাভাষাবাসীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এক মহাবিপ্লব সৃষ্টি করেছিল। বর্ণপরিচয় এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি শিশুদের উপযোগী সহজবোধ্য ও সংক্ষিপ্ত বাক্যের সমন্বয়ে রচনা করা হয়েছে। শিশু বর্ণক্রমিক পদ্ধতিতে বর্ণ শিখবে, বর্ণের সঙ্গে মুখে মুখে ছোট ছোট শব্দ শিখবে, এরপর বর্ণপরিচয়-এর পরীক্ষা, তারপর বর্ণযোজনা ও ফলা সংযোগে বানান শেখার সূচনা। এরপর রয়েছে সহজবোধ্য ছোট বাক্যের ছোট ছোট প্রাঞ্জল গদ্য রচনা।
এই বইটির মধ্য দিয়েই বিদ্যাসাগর বাংলা বর্ণমালাকে সংস্কৃত ভাষার অযৌক্তিক শাসনজাল থেকে মুক্ত করেন এবং যুক্তি ও বাস্তবতাবোধের প্রয়োগে এই বর্ণমালার সংস্কার-সাধনে প্রবৃত্ত হন। সেই সময়ে প্রতিটি শিশু এই বইটি দিয়েই পড়াশুনার জগতে পা রাখত। খুব ছোট হলেও বইটি ছিল জ্ঞানগর্ভ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহুবার বলেছিলেন, বর্ণপরিচয়ের “জল পড়ে, পাতা নড়ে” এই দুটি লাইনই তার মনে প্রথম কবিতার ছন্দ তৈরি করেছিল। বাংলাভাষায় যতিচিহ্নের ব্যবহারসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। মূলত বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই বাংলা ভাষা আধুনিক ও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষার গৌরব লাভ করে।
এই বইটির মধ্য দিয়েই বিদ্যাসাগর বাংলা বর্ণমালাকে সংস্কৃত ভাষার অযৌক্তিক শাসনজাল থেকে মুক্ত করেন এবং যুক্তি ও বাস্তবতাবোধের প্রয়োগে এই বর্ণমালার সংস্কার-সাধনে প্রবৃত্ত হন। সেই সময়ে প্রতিটি শিশু এই বইটি দিয়েই পড়াশুনার জগতে পা রাখত। খুব ছোট হলেও বইটি ছিল জ্ঞানগর্ভ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহুবার বলেছিলেন, বর্ণপরিচয়ের “জল পড়ে, পাতা নড়ে” এই দুটি লাইনই তার মনে প্রথম কবিতার ছন্দ তৈরি করেছিল। বাংলাভাষায় যতিচিহ্নের ব্যবহারসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। মূলত বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই বাংলা ভাষা আধুনিক ও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষার গৌরব লাভ করে।
বর্ণপরিচয়ের সবচেয়ে আরো একটি আকর্ষণীয় দিক হলো, বিদ্যাসাগর সেই ১৮৫৫ সালে বসে এই বইটি লিখলেও বইটিতে ধর্ম ও সংস্কারের বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেননি এবং চমৎকারভাবে ছোট ছোট নীতিবাক্য দিয়ে সকল শ্রেণির শিশুদের উপযোগীতা বজায় রেখেছেন। (আসলে বিদ্যাসাগর ছিল প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসের উর্দ্ধে, বিজ্ঞান মনষ্ক একজন মানুষ) বর্ণপরিচয়ের ১৬৫ তম জন্মদিন ছিল গত ১৩ তারিখ। সময়ের আবর্তনে হয়তো বর্ণপরিচয়ের ব্যবহার শেষ হয়ে গেছে কিন্তু “বর্ণপরিচয়” এর অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা প্রতিটি বাঙালির অবশ্য কর্তব্য বলেই আমার মনে হয়।
এই বইটি এখন বাজারে পাওয়া যায় কিনা আমার জানা নেই, তবে বইটির একটি pdf সংস্করণ নিচের লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন