“দ্যা ভিঞ্চি কোড” ড্যান ব্রাউনের সবচেয়ে আলোচিত একটি বইয়ের নাম এবং অবশ্যই আমার পড়া একটি সেরা থ্রিলার। “দ্যা ভিঞ্চি কোড” পড়ার পর ড্যান ব্রাউনের বেশ ভক্ত হয়ে যাই। আমার পড়া ব্রাউনের লেখা দ্বিতীয় বইয়ের নাম “দ্যা লস্ট সিম্বল” আর মাত্র গতকালই শেষ করলাম ড্যান ব্রাউনের লেখা আরো একটি চমৎকার থ্রিলার “ডিসেপশন পয়েন্ট”। বইটা পড়ার সময় সত্যিই মনে হয়েছে এটা একটি থ্রিলার। থ্রিলার বলতে সাধারণত যা বোঝায় অর্থাৎ রহস্য, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা, উত্তেজনা,নাটকীয়তা সবকিছুই চমৎকারভাবে উপস্থিত হয়েছে “ডিসেপশন পয়েন্ট” বইটিতে।
বইটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যার সাথে যুক্ত হয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা একটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। কাহিনীর শুরুতে দেখা যায় সিনেটর সেজউইক স্যাক্সটন তার একমাত্র মেয়ে র্যাচেল স্যক্সটনের সাথে একটি রেস্টুরেন্ট দেখা করছেন।
সিনেটর স্যাক্সটন চান র্যাচেল তার নির্বাবনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করুক কিন্তু র্যাচেল তাতে রাজি নন। স্যাক্সটন NASA কে তার প্রচারণার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছেন, তার বক্তব্য নাসা’তে আমেরিকা প্রতি বছর যে খরচ করছে তার অধিকাংশই নষ্ট হচ্ছে এবং তিনি এই খরচ কমিয়ে সেই টাকা স্কুল-কলেজে ব্যয় করতে চান। সাধারণ জনগণ তার এই বক্তব্যকে ভালবেসেছে ফলে নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি এগিয়ে আছেন। তার মেয়ে র্যাচেল কাজ করে NRO (National Reconnaissance Office) এ একজন ডাটা বিশ্লেষক হিসাবে। বাবাকে সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় তার রাজনীতি সম্পর্কে র্যাচেলের কোন আগ্রহ নেই এবং এটা নিয়ে সে কোন কথা বলতে চায় না। র্যাচেল তার অফিসে ফিরে গেলে NRO প্রধান উইলিয়াম পিকারিং তাকে জানায় প্রেসিডেন্ট জার্ক হার্নি তার সাথে একটা ব্যক্তিগত মিটিং এর আগ্রহ প্রকাশ করে র্যাচেলের জন্য হেলিকপ্টার পাঠিয়েছেন। র্যাচেল অবাক হন, পিকারিং ধারণা করেন প্রেসিডেন্ট সম্ভাবত র্যাচেলকে রাজনৈতিক উদ্দেশে তার বাবার প্রতিপক্ষ ব্যবহার করতে চান যেহেতু প্রেসিডেন্ট জানেন র্যাচেলের সাথে তার বাবার সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। গভীর উদ্বেগ নিয়ে র্যাচেল প্রেসিডেন্টের পাঠানো হেলিকপ্টারে করে প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে রওনা হন। পথে র্যাচেল জানতে পারেন হেলিকপ্টারটি হোয়াইট হাউজে যাচ্ছে না, সেটি যাচ্ছে নাসার হেড কোয়ার্টারে। র্যাচেল অবাক হন। অবশেষে র্যাচেল প্রেসিডেন্টের সাথে তার ব্যক্তিগত বিমানে দেখা করেন। বিভিন্ন আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট জানান NASA অতি সম্প্রতি একটি বিশাল আবিষ্কার করেছে যেটা সম্পর্কে র্যাচেলকে জানানোই তাদের এই মিটিং এর মূল উদ্দেশ্য। আবিষ্কার সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট জানান স্বয়ং নাসা প্রধানই এ ব্যপারে তাকে জানাবেন। র্যাচেল আবারো অবাক হন। এরপর একটি ফাইটার বিমান র্যাচেলকে নিয়ে পাড়ি দেয় এন্টারটিকা মহাদেশে। সেখানে একটি গোপন গবেষণাগারে র্যাচেল জানতে পারে নাসার একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার সম্পর্কে। নাসা সেখানে ৪ শ ফুট বরফের গভীরে একটি উল্কাপিন্ড খুজে পেয়েছে, এই উল্কাপিন্ডের বিশেষত্ত্ব হচ্ছে এতে রয়েছে প্রাণীর জীবাশ্ম যার অর্থ এই যে, মহাবিশ্বে অন্য কোথায় (যেখান থেকে উল্কাপিন্ডটি এসেছে) রয়েছে প্রাণীর অস্তিত্ব। র্যাচেলকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় হোয়াইট হাইজে একটি ভিডীও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে একটি বক্তব্য দেওয়া। র্যাচেল সেটি করেন। প্রেসিডেন্ট ঘোষণা সরাসরি ঘোষণা দিয়ে নাসার এই আবিষ্কারের কথা জানিয়ে দেন বিশ্ববাসীকে। নাসার এই সাফল্যে আমেরিকা গর্বিত হয়ে ওঠে এবং প্রেসিডেন্ট জার্ক হার্নি নির্বাচনী প্রচারণায় আবার এগিয়ে যান। এমন সময় র্যাচেল এবং আরো ৪ জন জন বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন যে, NASA’র উল্কাপিন্ডটি আসলে ভূয়া। নাসা প্রধান কৌশলে তাদেরকে বাইরে পাঠিয়ে দেন। কিছু অজ্ঞান্ত ব্যক্তি র্যাচেল এবং এই বিজ্ঞানীদের হত্যা করতে তৎপর হয়ে ওঠে। র্যাচেল এবং আরো দুইজন অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও মারা যান ২ জন বিজ্ঞানী। র্যাচেল অন্য ২ জন বিজ্ঞানী এন্টার্কটিকা মহাদেশের বরফশীতল জলে যখন মৃত্যুর খুব কাছাকাছি ঠিক তখনই তাদেরকে উদ্ধার করে একটি ডুবোজাহাজ। সেজউইক স্যাক্সটন যখন নির্বাচনী প্রচারণায় পিছিয়ে গিয়ে ভেঙ্গে পড়েছেন তখনই উল্কাপিন্ড সম্পর্কিত তথ্যটি তার হাতে চলে যায়। তিনি একটি সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন। সংবাদ সম্মেলনা তিনি যদি জানিয়ে দেন যে নাসার আবিষ্কারটি ভূয়া তাহলে নির্বাচনী প্রচারণায় আবারো তিনি এগিয়ে যাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি কি পারবেন হাটে হাড়ি ভাঙ্গতে? কিংবা নাসার এই জালিয়াতির পিছনে কে আছেন? স্বয়ং প্রেসিডেন্ট না অন্য কেউ?
একটা চরম নাটকীয়তায় ভরে ওঠে উপন্যাসের শেষ মুহূর্তগুলো যা পড়তে পড়তে যেকোন পাঠকই অভিভূত হয়ে পড়বেন। কি সেই নাটকীয়তা জানতে পড়ে নিন ড্যান ব্রাউনের এই বিশ্বখ্যাত বইটি। উপরে আলোচিত চরিত্রগুলো ছাড়াও আরো কিছু চরিত্র আছে যা আপনাকে আকর্ষণ করবে গ্যাব্রিয়েল (স্যাক্সটনের ব্যক্তিগত সহকারী), ট্রেঞ্চ (হোয়াইট হাইজের কর্মকর্তা), টোল্যান্ড (একজন বেসামরিক বিজ্ঞানী)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন