ফেলুদা ও তপসে |
গোয়েন্দা গল্প কার না ভালো লাগে? শিশু
থেকে বৃদ্ধ প্রায় প্রত্যেক বয়সের সাহিত্যপ্রেমী মানুষের কাছেই রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প/উপন্যাসের
জনপ্রিয়তা রয়েছে। নাটকীয়ভাবে আমার প্রথম গোয়েন্দা গল্প পড়া শুরু হয় স্যার আর্থার কোনান
ডয়েলের ‘শার্লক হোমস’ কে দিয়ে। স্কুলের লাইব্রেরি থেকে ‘শার্লক হোমস সমগ্র’র প্রথম
গল্পটি পড়েই ভাল লেগেছিল হোমস আর ওয়াটসনকে। এরপর সত্যজিত রায়ের অমর সৃষ্টি ফেলুদা।
তারপর একে একে ব্যোমকেশ, কিরীটী, মাসুদ রানা, অর্জুন, ঋজুদা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে নিঃসন্দেহে
এদের সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভালোলাগা নায়কের নাম ‘ফেলুদা’। ফেলুদার প্রায় প্রতিটি
গল্পই একাধিকবার পড়েছি এবং হয়তো আগামী দিনগুলোতেও পড়ব। ‘ফেলুদা’কে নিয়েই আজকের আয়োজন।
ফেলুদার আসল নাম প্রদোষ মিত্র। ফেলুদা
সিরিজের প্রথম গল্প “ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি” প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসের
সন্দেশ পত্রিকায়। ফেলুদার খুড়তুতো ভাই তপেশরঞ্জন মিত্র ফেলুদা যাকে তপসে বলে ডাকেন
এবং ফেলুদার গল্পগুলো যার লেখনীতেই পাঠকের কাছে পৌছায়, প্রথম গল্পে তপসে বলেছেন তার
বয়স ১৩ এবং তার দাদার বয়স প্রায় ডাবল ২৭। সে হিসাবে ধরে নেওয়া যায় ফেলুদার জন্ম ১৯৩৮
সালে। ছোটবেলায় ফেলুদার মা-বাবা মারা যান। তখন থেকে ফেলুদা থাকেন তপেসদের পরিবারে,
২১ রজনী সেন রোড, দক্ষিণ কোলকাতা। ফেলুদার বাবা জয়কৃষ্ণ মিত্র ঢাকা
কলেজিয়েট স্কুলে গণিত ও সংস্কৃতের শিক্ষক ছিলেন বলে জানা গেলেও মা সম্পর্কে
কোন তথ্য জানা যায়না। উচ্চতা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। ফেলুদার সিগারেটের নেশা আছে, প্রিয় ব্র্যান্ড
চারমিনার। নিয়মিত যোগ-ব্যয়াম করেন ফেলুদা তাই সুঠাম দেহের অধিকারী। যদিও তার একটি লাইসেন্স
করা পিস্তল আছে কিন্তু অধিকাংশ সময় তার ব্যবহার হয়না। ফেলুদা তার প্রচন্ড বুদ্ধিমত্তা
দিয়ে সকল রহস্যের সমাধান করে থাকেন। গোয়েন্দা পেশায় প্রবেশের পূর্বে কিছুদিন ফেলুদা
একটা বেসরকারী অফিসে চাকরিও করতেন। ফেলুদা গল্পগুলোর একটা বিশেষ আকর্ষণ ভ্রমণকাহিনী।
প্রায় প্রতিটি গল্পেই রহস্য সমাধান করতে ফেলুদা কোন না কোন নতুন শহরে গিয়েছেন। কখনও
শিমলা, কখনও গ্যাংটক, কখনও পুরী কখনও বা লন্ডন, কিংবা কাটমান্ডু। ফেলুদা যেসব নতুন
শহরে যান তার সম্পর্কে পূর্বেই পড়াশুনা করে নেন। ফলে গল্পের বর্ণনায় পাঠকের কাছে ফুটে
ওঠে চমৎকার সব অজানা তথ্য।
ফেলুদা গল্পগুলোর আরেকটি অসাধারণ চরিত্র
লালমোহন গাঙ্গুলী যিনি ফেলুদার বন্ধু এবং জটায়ু ছদ্মনামে গোয়েন্দা কাহিনী লিখে থাকেন।
তার গল্পের নায়কের নাম ‘প্রখর রুদ্র’। “সোনার কেল্লা” অভিযানে ট্রেনের ভিতরে ফেলুদা
ও তপেসের সাথে লালমোহন গাঙ্গুলীর প্রথম পরিচয় হয়। তারপর প্রায় প্রতিটি গল্পে ফেলুদার
সাথে তপেস এবং লালমোহন গাঙ্গুলীকে সঙ্গী হিসাবে থাকতে দেখা যায়।
সিধু জ্যাঠা ফেলুদা সিরিজের আর একটি আকর্ষণীয়
চরিত্র। সিধু জ্যাঠা ফেলুদা বা তপেসের আপন জ্যাঠা নয়, তপেসের বাবার বন্ধু।
বাংলা সাহিত্যে অনেক গোয়েন্দা চরিত্র
থাকলেও ফেলুদা’র জনপ্রিয়তা শুরু থেকে কখনই বিন্দুমাত্র কমেনী বরং দিন দিন ফেলুদার ভক্ত
বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে এবং আগামীতেও হয়তো পাঠকের মধ্যে বেঁচে থাকবেন সত্যোজিত রায়ের এই
অমর সৃষ্টি।
একাধিকবার ফেলুদা সিরিজের বিভিন্ন গল্পকে
চলচিত্রায়িত করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অনেকেই ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করলেও কিংবদন্তী
অভিনেতা সব্যসাচী চক্তবর্তী’র অভিনয় সবচেয়ে সাড়া জাগানো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন