সম্প্রতি নীললোহিতের প্রেমে পড়েছি। হিমু পড়ে যেমন অনুভূতি হয়েছিল,
প্রত্যেক মানুষের ভিতরে একজন হিমু ঘুমিয়ে আছে, নীললোহিত পড়েও তেমনি মনে হচ্ছে। মনে
হচ্ছে প্রতিদিনের এই যান্ত্রিক নিয়মের বাঁধ ভেঙ্গে হয়ে যাই নীললোহিত। কিন্তু বাস্তবে
আমাদের পক্ষে হিমুও হওয়া সম্ভব নয়, নীললোহিতও হওয়া সম্ভব নয়। তবে একটা কাজ অবশ্যই হতে
পারে, বইয়ের ভিতর ডুব দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য হিমু বা নীলের সাথে মিশে যাওয়া। সেটাই করছি।
গতকাল শেষ করলাম “চলো দিকশূন্যপুর”।
চাকরি করার হাত থেকে বাঁচতে নীলু একদিন
চলে যায় দিকশূন্যপুরে, যেখানে আছে তার বন্দনাদি। বন্দনাদিকে সে ভালোবাসে, তবে সেটা
প্রেম নয় আবার ভাই-বোনের মত ভালোবাসাও নয়, সেটা একটা অদ্ভুত সম্পর্ক। আসলে দিকশূন্যপুরে
সকলের আচরণই একটু অদ্ভুত, কেউ কাউকে ভালোবাসে না আবার সবাই সবাইকে ভালোবাসে। কেউ কারো
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাথা ঘামায় না তবে সবাই সবার বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
শহরের কোলাহল থেকে বহু দূরে নির্জন পাহাড়ের কোলে যেন স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা চমৎকার এক রাজ্য
দিকশূন্যপুর। নীলুর ভাষায়--
“যারা জীবনে
কখনো দিকশূন্যপুরে যায়নি,
কিংবা সে-জায়গাটার নামও শোনেনি, তারা বুঝতে পারবে না তারা কী থেকে
বঞ্চিত হচ্ছে। যার অস্তিত্বই জানা নেই, তাকে না-পাওয়ার তো কোনো দুঃখ থাকে
না। কিন্তু যারা দিকশূন্যপুরে একবার গেছে, কিন্তু বারবার ফিরে যেতে পারেনি, তাদের
অতৃপ্তির শেষ নেই। আমি মাঝে মাঝে সেই জায়গাটার কথা ভাবি, কিন্তু
আমারও যাওয়া হয়ে ওঠে না। কেউ আমাকে ডেকে নিয়ে যায় দক্ষিণে, কেউ
উত্তরে।”
দিকশূন্যপুরে
নীলের পরিচয় ঘটে রোহিলা’র সাথে। প্রথমবার রোহিলাকে কিছুটা পাগল মনে হয় নীলুর। কিন্তু
রোহিলা আসলে পাগল নয়। বাসুদেবন নামে একজন মানুষ আসে দিকশূন্যপুরে। সে রোহিলাকে ডাকে
সুলোচনা নামে, দাবী করে সুলোচনা আসলে তার স্ত্রী। কিন্তু রোহিলা বার বার তা অস্বীকার
করে। রোহিলা এবং বাসুদেবনকে ঘীরে দিকশূন্যপুরে এক সংকট উপস্থিত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত
নীলু আবিস্কার করে সকলে বাসুদেবন একজন কবি। লোকে তাকে যতটা খারাপ মনে করে আসলে সে তার
চেয়ে অনেক ভালো।
আমাদের প্রত্যেকের
ভিতর ঘুমিয়ে থাকা সরল, নিষ্পাপ শিশুর সাথে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসার জন্য দিকশূন্যপুর
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত একটি উপন্যাস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন