মহিষাসুরমর্দিনী
রচনা
– বাণীকুমার
গ্রন্থণা
ও শ্লোকপাঠ – বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র
সঙ্গীত
পরিচালনা – পঙ্কজ কুমার মল্লিক
যা চণ্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী যা মাহিষোন্মূলিনী
যা
ধূম্রেক্ষণচণ্ডমুণ্ডমথনী যা রক্তবীজাশনী ।
শক্তিঃ
শুম্ভনিশুম্ভদৈত্যদলনী যা সিদ্ধিদাত্রী পরা
সা
দেবী নবকোটীমূর্তিসহিতা মাং পাতু বিশ্বেশ্বরী ।।
(বিঃ দ্রঃ– সংস্কৃতে “য”- এর উচ্চারণ “য়” হয়।)
{শ্রীশ্রীচণ্ডিকার ধ্যান, শ্লোক – ৩}
[যে চণ্ডিকা মধুকৈটভাদি-দৈত্যনাশিনী, যিনি
মহিষাসুরমর্দিনী, যিনি ধূম্রলোচন-চণ্ড-মুণ্ড-সংহারিণী,
যিনি রক্তবীজ-ভক্ষয়ত্রী, যে মহাশক্তি
শুম্ভ-নিশুম্ভ-অসুর-বিনশিনী ও শ্রেষ্ঠা সিদ্ধিদাত্রী এবং নবকোটী-সহচরী-পরিবৃতা,
সেই জগদীশ্বরী দেবী আমাকে পালন করুন।]
আশ্বিনের
শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর;
ধরণীর
বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা;
প্রকৃতির
অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।
আনন্দময়ী
মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।
তাই
আনন্দিতা শ্যামলীমাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন।
আজ
চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ-স্মৃতিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা।
সিংহস্থা
শশিশেখরা মরকতপ্রখ্যা চতুর্ভির্ভুজৈঃ
শঙ্খং
চক্রধনুঃশরাংশ্চ দধতী নেত্রৈস্ত্রিভিঃ শোভিতা ।
আমুক্তাঙ্গদ-হার-কঙ্কণ-রণৎ-কাঞ্চীক্বণন্নূপুরা
দুর্গা
দুর্গতিহারিণী ভবতু নো রত্নোল্লসৎকুণ্ডলা ।।
{শ্রীশ্রীচণ্ডী, মহাসরস্বতীর ধ্যান, শ্লোক – ২}
[সিংহারূঢ়া শশিশেখরা, মরকতমণির তুল্য প্রভাময়ী,
চারিহস্তে শঙ্খ, চক্র ও ধনুর্বাণ ধারিণী,
ত্রিনয়ন দ্বারা শোভিতা, কেয়ূর, হার ও বলয় এবং মৃদু-মধুর ধ্বনিযুক্তা চন্দ্রহার ও নূপুর পরিহিতা এবং রত্নে
উজ্জ্বল কুণ্ডল ভূষিতা দুর্গা আমাদের দুর্গতি নাশ করুন।]
মহামায়া
সনাতনী,
শক্তিরূপা, গুণময়ী।
তিনি
এক,
তবু প্রকাশ বিভিন্ন—
দেবী
নারায়ণী,
আবার
ব্রহ্মশক্তিরূপা ব্রহ্মাণী,
কখনো
মহেশ্বেরী রূপে প্রকাশমানা,
কখনো
বা নির্মলা কৌমারী রূপধারিণী,
কখনো
মহাবজ্ররূপিণী ঐন্দ্রী,
উগ্রা
শিবদূতী,
নৃমুণ্ডমালিনী
চামুণ্ডা,
তিনিই
আবার তমোময়ী নিয়তি।
এই
সর্বপ্রকাশমানা মহাশক্তি পরমা প্রকৃতির আবির্ভাব হবে, সপ্তলোক তাই আনন্দমগ্ন।
বাজলো
তোমার আলোর বেণু, মাতলো যে ভুবন।
আজ
প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিনু মন।
অন্তরে
যা লুকিয়ে রাজে, অরুণ বীণায় সে সুর বাজে;
এই
আনন্দ যজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ।
আজ
সমীরণ আলোয় পাগল নবীন সুরের বীণায়,
আজ
শরতের আকাশবীণায় গানের মালা বিলায়।
তোমায়
হারা জীবন মম, তোমারি আলোয় নিরুপম।
ভোরের
পাখি উঠে গাহি তোমারি বন্দন।
হে
ভগবতী মহামায়া, তুমি ত্রিগুণাত্মিকা;
তুমি
রজোগুণে ব্রহ্মার গৃহিণী বাগ্দেবী,
সত্ত্বগুণে
বিষ্ণুর পত্নী লক্ষ্মী,
তমোগুণে
শিবের বণিতা পার্বতী,
আবার
ত্রিগুণাতীত তুরীয়াবস্থায় তুমি অনির্বচনীয়া, অপারমহিমময়ী, পরব্রহ্মমহিষী;
দেবী
ঋষি কাত্যায়নের কন্যা কাত্যায়নী,
তিনি
কন্যাকুমারী আখ্যাতা দুর্গি,
তিনিই
আদিশক্তি আগমপ্রসিদ্ধমূর্তিধারী দুর্গা,
তিনি
দাক্ষায়ণী সতী;
দেবী
দুর্গা নিজ দেহ সম্ভূত তেজোপ্রভাবে শত্রুদহনকালে অগ্নিবর্ণা, অগ্নিলোচনা।
এই
ঊষালগ্নে,
হে মহাদেবী, তোমার উদ্বোধনে বাণীর
ভক্তিরসপূর্ণ বরণ কমল আলোক শতদল মেলে বিকশিত হোক দিকে-দিগন্তে;
হে
অমৃতজ্যোতি, হে মা দুর্গা, তোমার আবির্ভাবে
ধরণী হোক প্রাণময়ী।
জাগো!
জাগো,
জাগো মা!
জাগো, জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী।
অভয়া
শক্তি,
বলপ্রদায়িনী, তুমি জাগো।
জাগো, তুমি জাগো।
প্রণমি
বরদা,
অজরা, অতুলা,
বহুবলধারিণী, রিপুদলবারিণী, জাগো মা।
শরন্ময়ী, চণ্ডিকা, শঙ্করী জাগো, জাগো
মা।
জাগো
অসুর বিনাশিনী, তুমি জাগো।
জাগো
দুর্গা,
জাগো দশপ্রহরণধারিণী।
অভয়া
শক্তি,
বলপ্রদায়িনী, তুমি জাগো।
জাগো, তুমি জাগো।
দেবী
চণ্ডিকা সচেতন চিন্ময়ী, তিনি নিত্যা, তাঁর
আদি নেই, তাঁর প্রাকৃত মূর্তি নেই, এই
বিশ্বের প্রকাশ তাঁর মূর্তি।
নিত্যা
হয়েও অসুর পীড়িত দেবতা রক্ষণে তাঁর আবির্ভাব হয়।
দেবীর
শাশ্বত অভয়বাণী—
“ইত্থং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি ।।
তদা
তদাবতীর্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম্ ।।”
{শ্রীশ্রীচণ্ডী, একাদশ অধ্যায়— নারায়ণীস্তুতি,
শ্লোক – ৫৪-৫৫}
[এই প্রকারে যখনই দানবগণের প্রাদুর্ভাববশতঃ বিঘ্ন উপস্থিত হইবে তখনই আমি
আবির্ভূতা হইয়া দেব-শত্রু অসুরগণকে বিনাশ করিব।]
পূর্বকল্প
অবসানের পর প্রলয়কালে সমস্ত জগৎ যখন কারণ-সলিলে পরিণত হল, ভগবান বিষ্ণু অখিল-শক্তির প্রভাব সংহত করে সেই কারণ-সমুদ্রে রচিত অনন্ত-শয্যা ‘পরে যোগনিদ্রায়
হলেন অভিভূত।
বিষ্ণুর
যোগনিদ্রার অবসানকালে তাঁর নাভিপদ্ম থেকে জেগে উঠলেন ভাবী কল্পের সৃষ্টি-বিধাতা ব্রহ্মা।
কিন্তু
বিষ্ণুর কর্ণমলজাত মধুকৈটভ-অসুরদ্বয় ব্রহ্মার কর্ম, অস্তিত্ব বিনাশে
উদ্যত হতে পদ্মযোনি ব্রহ্মা যোগনিদ্রায় মগ্ন সর্বশক্তিমান বিশ্বপাতা বিষ্ণুকে
জাগরিত করবার জন্য জগতের স্থিতি-সংহারকারিণী বিশ্বেশ্বরী জগজ্জননী
হরিনেত্র-নিবাসিনী নিরূপমা ভগবতীকে স্তবমন্ত্রে করলেন উদ্বোধিত।
এই
ভগবতী বিষ্ণুনিদ্রারূপা মহারাত্রি যোগনিদ্রা দেবী।
ওগো
আমার আগমনী আলো,
জ্বালো
প্রদীপ জ্বালো।
এই
শারদের ঝঞ্ঝাবাতে
নিশার
শেষে রুদ্রবাতে
নিভল
আমার পথের বাতি
নিভল
প্রাণের আলো।
ওগো
আমার পথ দেখানো আলো
জীবনজ্যোতিরূপের
সুধা ঢালো ঢালো ঢালো।
দিক
হারানো শঙ্কাপথে আসবে,
অরুণ
রাতে আসবে কখন আসবে,
টুটবে
পথের নিবিড় আঁধার,
সকল
দিশার কালো।
বাজাও
আলোর কণ্ঠবীণা
ওগো
পরম ভালো।
{শ্রীশ্রীচণ্ডী, প্রথম অধ্যায়— মধুকৈটভবধ, শ্লোক – ৭৩-৮২}
ত্বং
স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষট্কারঃ স্বরাত্মিকা । ৭৩
সুধা
ত্বমক্ষরে নিত্যে ত্রিধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা ।।
[নিত্যে, অক্ষরে, আপনিই
দেবদ্দেশ্যে হবির্দানের স্বাহামন্ত্ররূপা। আপনিই পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে দ্রব্যদানের
স্বধামন্ত্ররূপা। আপনিই দেবাহ্বানের বষট্মন্ত্রস্বরূপা ও উদাত্তাদিস্বররূপা।
আপনিই অমৃতরূপা এবং অ-উ-ম ত্রিবিধ মাত্রারূপে অবস্থিতা প্রণবরূপা।]
অর্ধমাত্রা
স্থিতা নিত্যা যানুচ্চার্যা বিশেষতঃ । ৭৪
ত্বমেব
সা ত্বং সাবিত্রী ত্বং দেবজননী পরা ।।
[বিশেষরূপে যাহা অনুচ্চার্যা নির্গুণা বা তুরীয়া, তাহাও
আপনি। হে দেবী, আপনি গায়ত্রিমন্ত্ররূপা শ্রেষ্ঠা শক্তি ও
দেবগণের আদি মাতা।]
ত্বয়ৈব
ধার্যতে সর্বং ত্বয়ৈতৎ সৃজ্যতে জগৎ। ৭৫
ত্বয়ৈতৎ
পাল্যতে দেবি ত্বমৎস্যন্তে চ সর্বদা।।
[হে দেবী, আপনিই এই জগৎ ধারণ করিয়া রহিয়াছেন। আপনি এই
জগৎ সৃষ্টি করেন, আপনিই ইহা পালন করেন এবং সর্বদা প্রলয়কালে
আপনিই ইহা সংহার করেন।]
বিসৃষ্টৌ
সৃষ্টিরূপা ত্বং স্থিতিরূপা চ পালনে । ৭৬
তথা
সংহৃতিরূপান্তে জগতোঽস্য জগন্ময়ে ।।
(বিঃ দ্রঃ – ‘ঽ'[‘হ’ নয়, মাত্রাছাড়া
‘হ’] হল লুপ্ত ‘অ’-কার। সংস্কৃতে সন্ধিতে ঃ+অ=োঽ হয়। যেমন জগতঃ+অস্য= জগতোঽস্য,
বা নমঃ+অস্তু= নমোঽস্তু, বা সঃ+অহম= সোঽহম।
‘ঽ’-এর উচ্চারণ আগের ‘ো/ও’-এর উচ্চারণকেই একটু টেনে করা হয়।)
[হে জগৎস্বরূপা, আপনি এই জগতের সৃষ্টিকালে
সৃষ্টিশক্তিস্বরূপা, পালনকালে স্থিতিশক্তিস্বরূপা এবং
প্রলয়কালে সংহারশক্তিস্বরূপা।]
মহাবিদ্যা
মহামায়া মহামেধা মহাস্মৃতিঃ । ৭৭
মহামোহা
চ ভবতী মহাদেবী মহাসুরী ।।
[আপনি মহাবাক্যলক্ষণা ব্রহ্মবিদ্যা ও সংসৃতিকর্ত্রী মহামায়া। আপনি মহতী
মেধা (ধারণা), মহতী স্মৃতি ও মহামোহ। আপনি মহতী দেবশক্তি এবং
মহতী অসুরশক্তি।]
প্রকৃতিস্ত্বং
হি সর্বস্য গুণত্রয়বিভাবিনী । ৭৮
কালরাত্রির্মহারাত্রির্মোহরাত্রিশ্চ
দারুণা ।।
[আপনিই সর্বভূতের প্রকৃতি ও ত্রিগুণের পরিণাম বিধায়িনী। আপনি কালরাত্রি
(যাহাতে ব্রহ্মার লয় হয়) ও মহারাত্রি (যাহাতে জগতের লয় হয়) । আপনি দুষ্পরিহারা
মহামোহনিশা বা মানুষী রাত্রি (যাহাতে জীবের নিত্য লয় হয়) ।]
ত্বং
শ্রীস্ত্বমীশ্বরী ত্বং হ্রীস্ত্বং বুদ্ধির্বোধলক্ষণা । ৭৯
লজ্জা
পুষ্টিস্তথা তুষ্টিস্ত্বং শান্তিঃ ক্ষান্তিরেব চ ।।
[আপনি লক্ষ্মী, আপনি ঈশ্বরশক্তি, আপনি হ্রী, আপনি নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি। আপনি লজ্জা,
পুষ্টি এবং তুষ্টি। আপনিই শান্তি ও ক্ষান্তি।]
খড়্গিনী
শূলিনী ঘোরা গদিনী চক্রিণী তথা । ৮০
শঙ্খিনী
চাপিনী বাণভুসণ্ডীপরিঘায়ুধা ।।
[আপনি খড়্গধারিণী, ত্রিশূলধারিণী, (এক হস্ত নরশির ধারণে) ভয়ঙ্করী, গদাধারিণী, চক্রধারিণী, শঙ্খধারিণী, ধনুর্ধারিণী
এবং বাণ, ভূশণ্ডী ও পরিঘাস্ত্রধারিণী।]
সৌম্যাসৌম্যতরাশেষসৌম্যেভ্যস্ত্বতিসুন্দরী
। ৮১
পরা
পরাণাং পরমা ত্বমেব পরমেশ্বরী ।। ৮২
[আপনি দেবগণের প্রতি সৌম্যা এবং দৈত্যগণের প্রতি ততোধিক রুদ্রা। আপনি সকল
সুন্দর বস্তু অপেক্ষাও সুন্দরী। আপনি ব্রহ্মাদিরও শ্রেষ্ঠ। আপনি সর্বপ্রধানা দেবী
এবং পরমেশ্বরের মহাশক্তি।]
তব
অচিন্ত্য রূপচরিত মহিমা।
নব
শোভা নব ধ্যান রূপায়িত প্রতিমা।
বিকশিল
জ্যোতি প্রীতি মঙ্গল বরণে।
তুমি
সাধনঘন ব্রহ্ম, গোধন সাধনী,
তব
প্রেমনয়নবাতি নিখিল তারণী,
কনককান্তি
ঝরিছে কান্ত বদনে।
হে
মহালক্ষ্মী জননী, গৌরী, শুভদা,
জয়সঙ্গীত
ধ্বনিছে তোমারি ভুবনে।
তখন
প্রলয়ান্ধকাররূপিণী তামসী দেবী এই স্তবে প্রবুদ্ধা হয়ে বিষ্ণুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে
বাহির হলেন; বিষ্ণুর যোগনিদ্রা ভঙ্গ হল। বিষ্ণু সুদর্শনচক্র চালনে
মধুকৈটভের মস্তক ছিন্ন করলেন। পুনরায় ব্রহ্মা ধ্যানমগ্ন হলেন।
এদিকে
কালান্তরে দুর্ধর্ষ দৈত্যরাজ মহিষাসুরের পরাক্রমে দেবতারা স্বর্গের অধিকার
হারালেন। অসুরপতির অত্যাচারে দেবলোক বিষাদব্যথায় পরিগ্রহণ হয়ে গেল।
দেবগণ
ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন। ব্রহ্মার বরেই মহিষাসুর অপরাজেয়; তাঁর দ্বারা দৈত্যরাজের ক্ষয় সম্ভবপর নয় জেনে তাঁরই নির্দেশে অমরবৃন্দ
কমলযোনি বিধাতাকে মুখপাত্র করে বৈকুণ্ঠে গিয়ে দেখলেন, হরিহর
আলাপনে রত।
ব্রহ্মা
স্বমুখে নিবেদন করলেন মহিষাসুরের দুর্বিষহ অত্যাচারের কাহিনী। স্বর্গভ্রষ্ট
দেবতাকুলের এই বার্তা শুনলেন তাঁরা।
শান্ত
যোগীবর মহাদেবের সুগৌর মুখমণ্ডল ক্রোধে রক্তজবার মত রাঙা বরণ ধারণ করলে আর
শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী নারায়ণের আনন ভ্রুকূটিকুটিল হয়ে উঠল।
তখন
মহাশক্তির আহ্বানে গগনে গগনে নিনাদিত হল মহাশঙ্খ।
বিশ্বযোনি
বিষ্ণু রুদ্রের বদন থেকে তেজোরাশি বিচ্ছুরিত হল;
ব্রহ্মা
ও দেবগণের আনন থেকে তেজ নির্গত হল।
এই
পর্বতপ্রমাণ জ্যোতিপুঞ্জ প্রজ্জ্বলিত হুতাশনের ন্যায় দেদীপ্যমান কিরণে দিঙ্মণ্ডল
পূর্ণ করে দিলে।
ওই
তেজরশ্মি একত্র হয়ে পরমা রূপবতী দিব্যশ্রী মূর্তি উৎপন্ন হল।
তিনি
জগন্মাতৃকা মহামায়া। এই আদ্যাদেবী ঋক্মন্ত্রে ঘোষণা করলেন আত্মপরিচয়—
{দেবীসূক্ত— ঋগ্বেদ, ১০ম মণ্ডল, ১০ম অনুবাক্ ১২৫ সূক্ত, শ্লোক – ১-৮}
অহং
রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরাম্যহম্
আদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ।
অহং
মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহম্
ইন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা।। ১
[আমি একাদশ রুদ্র, অষ্ট বসু, দ্বাদশ
আদিত্য এবং বিশ্ব দেবতারূপে বিচরণ করি। আমি মিত্র ও বরুণ উভয়কে ধারণ করি। আমি
ইন্দ্র ও অগ্নি এবং অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে ধারণ করি।]
অহং
সোমমাহনসং বিভর্ম্যহং
ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম্।
অহং
দধামি দ্রবিণং হবিষ্মতে
সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্বতে।। ২
[আমি দেবশত্রুহন্তা সোমদেবকে, ত্বষ্টা-নামক দেবতাকে
এবং পূষা অভগ নামক সূর্যদ্বয়কে ধারণ করি। উত্তম হবিঃযুক্ত, উপযুক্ত
হবিঃ দ্বারা দেবগণের তৃপ্তিসাধনকারী এবং বিধিপূর্বক সোমরসপ্রস্তুতকারী যজমানের
জন্য যজ্ঞফলরূপ ধনাদি আমিই বিধান করি।]
অহং
রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং
চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্ ।
তাং
মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা
ভূরিস্থাত্রাং ভূর্যাবেশয়ন্তীম্।। ৩
[আমিই সমগ্র জগতের ঈশ্বরী, উপাসকগণের ধনপ্রদাত্রী,
পরব্রহ্মকে আত্মারূপে সাক্ষাৎকারিণী। অতএব যজ্ঞার্হগণের মধ্যে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠা।
আমি প্রপঞ্চরূপে বহুভাবে অবস্থিতা ও সর্বভুতে জীবরূপে প্রবিষ্টা। আমাকেই সর্বদেশে
সুরনরাদি যজমানগণ বিবিধভাবে আরাধনা করে।]
ময়া
সো অন্নমত্তি যো বিপশ্যতি
যঃ প্রাণিতি য ঈং শৃণোত্যুক্তম্।
অমন্তবো
মাং ত উপক্ষিয়ন্তি
শ্রুধি শ্রুত শ্রদ্ধিবং তে বদামি।। ৪
[আমারই শক্তিতে সকলে আহার ও দর্শন করে, শ্বাসপ্রশ্বাসাদি
নির্বাহ করে এবং উক্ত বিষয় শ্রবণ করে। যাহারা আমাকে অন্তর্যামিনীরূপে জানে না,
তাহারাই জন্মমরণাদি ক্লেশ প্রাপ্ত হয় বা সংসারে হীন হয়। হে
কীর্তিমান সখা, আমি তমাকে শ্রদ্ধালভ্য ব্রহ্মতত্ত্ব বলছি,
শ্রবণ কর।]
অহমেব
স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং
দেবেভিরুত মানুষেভিঃ ।
যং
যং কাময়ে তং তমুগ্রং কৃণোমি
তং ব্রহ্মাণং তমৃষি তং সুমেধাম্ ।। ৫
[দেবগণ ও মনুষ্যগণের প্রার্থিত ব্রহ্মতত্ত্ব আমি স্বয়ং উপদেশ করিতেছি। আমি
ঈদৃশ ব্রহ্মস্বরূপিণী। আমি যাহাকে যাহাকে ইচ্ছা করি তাহাকে তাহাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ
করি। আমি কাহাকে ব্রহ্মা করি, কাহাকে ঋষি করি এবং কাহাকেও বা
অতি ব্রহ্মমেধাবান্ করি।]
অহং
রুদ্রায় ধনুরাতনোমি
ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ।
অহং
জনায় সমদং কৃণোম্যহং
দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ।। ৬
[ব্রাহ্মণবিদ্বেষী হিংস্র-প্রকৃতি ত্রিপুরাসুর-বধার্থ রুদ্রের ধনুকে আমিই
জ্যা সংযুক্ত করি। ভক্তজনের কল্যাণার্থ আমিই যুদ্ধ করি এবং স্বর্গে ও পৃথিবীতে
অন্তর্যামিনীরূপে আমিই প্রবেশ করিয়াছি।]
অহং
সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্
মম যোনিরপ্স্বন্তঃ সমুদ্রে।
ততো
বিতিষ্ঠে ভুবনানু বিশ্বো-
তামূং দ্যাং বর্ষ্মণোপস্পৃশামি।। ৭
[আমিই সর্বাধার পরমাত্মার উপরে দ্যুলোককে প্রসব করিয়াছি। বুদ্ধিবৃত্তির
মধ্যস্থ যে ব্রহ্মচৈতন্য উহাই আমার অধিষ্ঠান। আমিই ভূরাদি সমস্ত লোক সর্বভূতে
ব্রহ্মরূপে বিবিধভাবে বিরাজিতা। আমিই মায়াময় দেহ দ্বারা সমগ্র দ্যুলোক পরিব্যাপ্ত
আছি।]
অহমেব
বাত ইব প্রবাম্যা-
রভমাণা ভুবনানি বিশ্বা ।
পরো
দিবা পর এনা পৃথিব্যৈ-
তাবতী মহিনা সংবভূব ।। ৮
[আমিই ভূরাদি সমস্ত লোক সর্বভূত সৃষ্টি করিয়া বায়ুর মতো স্বচ্ছন্দে উহার
অন্তরে বাহিরে সর্বত্র বিচরণ করি। যদিও স্বরূপতঃ আমি এই আকাশের অতীত অ পৃথিবীর
অতীত অসঙ্গ-ব্রহ্মরূপিণী, তথাপি স্বীয় মহিমায় এই সমগ্র জগদ্-রূপ
ধারণ করিয়াছি।]
অপূর্ব
স্ত্রীমূর্তি মহাশক্তি দেবগণের অংশসম্ভূতা; দেবগণের সমষ্টিভূত
তেজোপিণ্ড এক বরবর্ণিনী শক্তিস্বরূপিণী দেবীমূর্তি ধারণ করলেন।
এই
দেবীর আনন শ্বেতবর্ণ, নেত্র কৃষ্ণবর্ণ, অধরপল্লব
আরক্তিম ও করতলদ্বয় তাম্রাভ।
তিনি
কখনো বা সহস্রভুজা, কখনো বা অষ্টাদশভুজারূপে প্রকাশিত হতে
লাগলেন।
এই
ভীমকান্তরূপিণী দেবী ত্রিগুণা মহালক্ষ্মী, তিনিই আদ্যামহাশক্তি।
মহাদেবীর
মহামহিমময় আবির্ভাবে বরণগীত ধ্বনিত হয়ে উঠল।
অখিল
বিমানে তব জয়গানে যে সামরব,
বাজে
সেই সুরে সোনার নুপূরে নিত্যে নব।
হে
আলোর আলো,
তিমির মিলাল,
তব
জ্যোতি সুধা চেতনা বিলাল;
রাগিণী
যে ছিঁড়ে গাহিল মধুরে সে বৈভব।
জয়ন্তী
মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী ।
দুর্গা
শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে ।।
{অর্গলা-স্তোত্র, শ্লোক – ২}
[হে দেবী, তুমি জয়ন্তী (জয়যুক্তা বা সর্বোৎকৃষ্টা),
মঙ্গলা (জন্মাদিনাশিনী); কালী (সর্বসংহারিণী),
ভদ্রকালী (মঙ্গল-দায়িনী), কপালিনী (প্রলয়কালে
ব্রহ্মাদির কপাল হস্তে বিচরণকারিণী), দুর্গা (দুঃখপ্রাপ্যা),
শিবা (চিৎস্বরূপা), ক্ষমা (করুণাময়ী), ধাত্রী (বিশ্বধারিণী), স্বাহা (দেবপোষিণী) এবং স্বধা
(পিতৃতোষিণী)-রূপা, তোমাকে নমস্কার।]
দেবীর
আবির্ভাবের এই শুভ বার্তা প্রকাশিত হল।
সকল
দেবদেবী মহাদেবীকে বরণ করলেন গীতিমাল্যে, সেবা করলেন রাগচন্দনে।
জগন্মাতা
চণ্ডিকা উপাসকের ধনদাত্রী, ব্রহ্মচৈতন্যস্বরূপা সর্বোত্তম মহিমা।
মহাদেবী
অন্তর্যামীরূপে ব্যক্ত হয়ে আছেন দ্যুলোক-ভূলোক।
ভুবনমোহিনী
সর্ববিরাজমানা জগদীশ্বরী, আপন মহিমায় দ্যাবা পৃথিবী ও সৃষ্টির মধ্যে
পরিব্যক্ত হয়ে অবস্থান করেন পরমচৈতন্যরূপা।
মানবের
কল্যাণে সর্বমঙ্গলা হোন উদ্বুদ্ধা।
শুভ্র
শঙ্খরবে সারা নিখিল ধ্বনিত।
আকাশতলে
অনিলে-জলে, দিকে-দিগঞ্চলে,
সকল
লোকে,
পুরে, বনে-বনান্তরে
নৃত্যগীতছন্দে
নন্দিত।
শরৎপ্রকৃতি
উল্লাসি তব গানে
চিরসুন্দর
চিরসুন্দর চিতসুন্দর বন্দনদানে
ত্রিলোকে
যোগে সুরন্ময়ী আনন্দে।
মহাশক্তিরূপা
মঞ্জুলশোভা জাগে আনন্দে
মা
যে কল্যাণী সদা রাজে,
সদা
সুখদা,
সদা বরদা, সদা জয়দা, ক্ষেমঙ্করী,
সুধা, হ্রদে।
অসুরদশন
দশপ্রহরণভুজা রাগে
রণিত
বীণাবেণু,
মধু ললিত শমিত তানে
শুভ
আরতি ঝঙ্কৃত ভুবনে নবজ্যোতি রাগে,
জ্যোতি
অলঙ্কারে তানে তানে ওঠে গীতি
সুধারসঘন
শান্তি ঝন ঝন জয়গানে।
দেবী
নিত্যা,
তথাপি দেবগণের কার্যসিদ্ধিহেতু সর্বদেবশরীরজ তেজঃপুঞ্জ থেকে তখন
প্রকাশিত হয়েছেন বলে তাঁর এই অভিনব প্রকাশ বা আবির্ভাবই মহিষমর্দিনীর উৎপত্তিরূপে
খ্যাত হল।
দেবী
সজ্জিতা হলেন অপূর্ব রণচণ্ডী মূর্তিতে।
হিমাচল
দিলেন সিংহবাহন,
বিষ্ণু
দিলেন চক্র,
পিনাকপাণি
শঙ্কর দিলেন শূল,
যম
দিলেন তাঁর দণ্ড,
কালদেব
সুতীক্ষ্ণ খড়্গ,
চন্দ্র
অষ্টচন্দ্র শোভা চর্ম দিলেন,
ধনুর্বাণ
দিলেন সূর্য,
বিশ্বকর্মা
অভেদবর্ম,
ব্রহ্মা
দিলেন অক্ষমালা-কমণ্ডলু,
কুবের
রত্নহার।
সকল
দেবতা মহাদেবীকে নানা অলঙ্কারে অলঙ্কৃত ও বিবিধপ্রহরণে সুসজ্জিত করে অসুরবিজয়
যাত্রায় যেতে প্রার্থনা করলেন।
রণদুন্দুভিধ্বনিতে
বিশ্বসংসার নিনাদিত হতে লাগল।
যাত্রার
পূর্বে সুর-নরলোকবাসী সকলেই দশপ্রহরণধারিণী দশভুজা মহাশক্তিকে ধ্যানমন্ত্রে করলেন
অভিবন্দনা।
{দেবী দুর্গার ধ্যান}
জটাজূটসমাযুক্তামর্ধেন্দুকৃতশেখরাম্
।
লোচনত্রয়সংযুক্তাং
পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্ ।।
[দেবী জটাজূটধারিণী, তাঁর শিখর অর্ধচন্দ্র দ্বারা
ভূষিত, তাঁর পূর্ণচন্দ্রের ন্যায় কান্তিময় মুখমণ্ডল ত্রিনয়ন
শোভিত।]
অতসীপুষ্পবর্ণাভাং
সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্।
নবযৌবনসম্পন্নাং
সর্বাভরণভূষিতাম্।।
[অতসী পুষ্পের ন্যায় দেবীর বর্ণ, তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত ও
সুলোচনা। নবযৌবনসম্পন্না দেবী সবরকম অলঙ্কারে ভূষিতা।]
সুচারুদশনাং
তদ্বৎ পীনোন্নত-পয়োধরাম্।
ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং
মহিষাসুরমর্দিনীম্।।
[সুচারু দন্তের এবং পীনোন্নত পয়োধরের (পয়ো= অমৃত) অধিকারিণী দেবী ত্রিভঙ্গ
ভঙ্গিমায় মহিষাসুরকে দমন করছেন।]
মৃণালায়ত-সংস্পর্শ-দশবাহুসমন্বিতাম্।
ত্রিশূলং
দক্ষিণে ধ্যেয়ং খড়্গং চক্রং ক্রমাদধঃ।।
তীক্ষ্ণবাণং
তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ।
[দেবী দশভুজা, তাঁর মৃণালের মত কোমল স্পর্শ। তাঁর
দক্ষিণ (ডান) হস্তে ত্রিশূল, খড়্গ, চক্র,
সুতীক্ষ্ণ বাণ এবং শক্তি অবস্থিত।]
খেটকং
পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেব চ।
ঘন্টাং
বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ।।
[দেবীর বামে খেটক, ধনু (পূর্ণচাপ), পাশ, অঙ্কুশ এবং ঘন্টা বা কুঠার (পরশু) অবস্থিত।]
অধস্তানন্মহিষং
তদ্বদ্বিশিরষ্কং প্রদর্শয়েৎ।।
রক্তারক্তীকৃতাঙ্গঞ্চ
রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্।
বেষ্টিতং
নাগপাশেন ভ্রূকুটি-ভীষণাননম্।।
[দেবী নিচে মহিষের শরীর হতে বাহির হয়ে আসা দানবরূপধারী মহিষাসুরের শিরচ্ছেদ
করছেন। মহিষাসুরের অঙ্গ রক্তাবৃত, বিস্ফারিত চক্ষু রক্তাভ।
ভ্রূকুটিকুটিল ভীষণদর্শন মুখ করে দেবী অসুরকে নাগপাশে বেষ্টিত করে আছেন।]
কিঞ্চিদুর্দ্ধং
তথা বামমঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি।
দেব্যাস্তু
দক্ষিণং পাদং সমং সিংহোপরি স্থিতম্।।
[দেবীর বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ কিঞ্চিৎ উপরে ও বামে মহিষের উপর এবং ডান পা
সিংহের পিঠের মাঝে অবস্থিত।
দেবীর
এই রূপ মনে সন্নিবেশ করলে প্রচণ্ডবদনা দেবী সর্বদা বলপ্রদান করেন।]
স্তূয়মানঞ্চ
তদ্রূপমমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ।
প্রচণ্ডবদনাং
দেবীং সর্বদাং বলপ্রদাং।।
[দেবীর এই রূপ মনে সন্নিবেশ করলে প্রচণ্ডবদনা দেবী সর্বদা বলপ্রদান করেন।]
উগ্রচণ্ডা
প্রচণ্ডা চ চণ্ডোগ্রা চণ্ডনায়িকা।
চণ্ডা
চণ্ডবতী চৈব চণ্ডরূপাতি চণ্ডিকা।।
আভিঃ
শক্তিভিষ্টাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাম্।
চিন্তয়েজ্জগতাং
ধাত্রীং ধর্মকামার্থমোক্ষদাং।।
[উগ্রচণ্ডা, প্রচণ্ডা, চণ্ডোগ্রা,
চণ্ডনায়িকা, চণ্ডা, চণ্ডবতী,
চণ্ডরূপা, অতিচণ্ডিকা— এই অষ্টশক্তি দারা দেবী
সর্বদা পরিবৃতা। তিনি জগৎকে ধারণ করে আছেন, তাঁর চিন্তা করলে
ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভ হয়।]
{অর্গলা-স্তোত্র, শ্লোক- ২}
জয়ন্তী
মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দুর্গা
শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে।।
[হে দেবী, তুমি জয়ন্তী (জয়যুক্তা বা সর্বোৎকৃষ্টা),
মঙ্গলা (জন্মাদিনাশিনী); কালী (সর্বসংহারিণী),
ভদ্রকালী (মঙ্গল-দায়িনী), কপালিনী (প্রলয়কালে
ব্রহ্মাদির কপাল হস্তে বিচরণকারিণী), দুর্গা (দুঃখপ্রাপ্যা),
শিবা (চিৎস্বরূপা), ক্ষমা (করুণাময়ী), ধাত্রী (বিশ্বধারিণী), স্বাহা (দেবপোষিণী) এবং স্বধা
(পিতৃতোষিণী)-রূপা, তোমাকে নমস্কার।]
দেবী
অষ্টাদশভুজামূর্তি পরিগ্রহণ করে শঙ্খে দিলেন ফুৎকার।
দেবীর
রণ-আহ্বানশব্দ অনুশরণ করে সসৈন্যে ধাবমান হল মহাবলশালী মহিষাসুর।
অসুররাজ
লক্ষ্য করলেন মহালক্ষ্মীদেবীর তেজঃপ্রভায় ত্রিলোক জ্যতির্ময়, তাঁর মুকুট গগন চুম্বন করছে, পদভারে পৃথ্বী আনতা আর
ধনুকটঙ্কারে রসাতল প্রকম্পিত।
দেবসেনাপতি
মহাশক্তির জয়মন্ত্রের গুণে দেবীকে দান করলেন মহাপ্রীতি।
নমো
চণ্ডী,
নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী।
জাগো
রক্তবীজনিকৃন্তিনী, জাগো মহিষাসুরবিমর্দিনী,
উঠে
শঙ্খমন্দ্রে অভ্রবক্ষ শঙ্কাশননে চণ্ডী।
তব
খড়্গশক্তি কৃতকৃতান্ত শত্রু শাতন তন্দ্রী
নত
সিংহবাহিনী ঘনহুংকারে ইন্দ্রাদি চমূতন্দ্রী।
তুমি
রণকতন্ত্র টঙ্কারে হানো খরকলম্বজলে
সব
রথ তুরঙ্গ ছিন্ন ছিন্ন সুতীক্ষ্ণ করবালে।
নাচো
ধূম্রনেত্র দনুজমুণ্ড চক্রপাতনে খণ্ডী,
তব
তাতাথৈ তাতাথৈ প্রলয় নৃত্য ধ্বংসে বাঁধন গণ্ডী।
দেবীর
সঙ্গে মহিষাসুরের প্রবল সংগ্রাম আরম্ভ হল।
দেবীর
অস্ত্রপ্রহারে দৈত্যসেনা ছিন্নভিন্ন হতে লাগল।
মহিষাসুর
ক্ষণে ক্ষণে রূপ পরিবর্তন করে নানা কৌশল বিস্তার করলে।
মহিষ
থেকে হস্তীরূপ ধারণ করলে; আবার সিংহরূপী দৈত্যের রণোন্মত্ততা দেবী
প্রশমিত করলেন।
পুনরায়
নয়নবিমোহন পুরুষবেশে আত্মপ্রকাশ করলে ওই ঐন্দ্রজালিক।
দেবীর
রূঢ় প্রত্যাখ্যান পেয়ে আবার মহিষমূর্তি গ্রহণ করলে।
রণবাদ্য
দিকে দিগন্তরে নিনাদিত, চতুরঙ্গ নিয়ে অসুরেশ্বর দেবীকে পরাজিত
করবার মানসে উল্লসিত।
দেবীর
বাহন সিংহরাজ দাবাগ্নির মত সমস্ত রণক্ষেত্রে শত্রুনিধনে দুর্নিবার হয়ে উঠল।
নানাপ্রহরণধারিণী
দেবী দুর্গা মধু পান করতে করতে মহিষরূপকে সদম্ভে বললেন,
“গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম্।
ময়া
ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।। “
{শ্রীশ্রীচণ্ডী, তৃতীয় অধ্যায়— মহিষাসুরবধ, শ্লোক ৩৮}
[“রে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধু পান করি ততক্ষণ তুই গর্জন
কর। আমি তকে বধ করিলে ইন্দ্রাদি দেবগণ এইস্থানে শীঘ্রই আনন্দধ্বনি করিবেন।”]
দেবতাগণ
সানন্দে দেখলেন, দুর্গা মহিষাসুরকে শূলে বিদ্ধ করেছেন আর খড়্গনিপাতে
দৈত্যের মস্তক ভূলুণ্ঠিত।
তখন
অসুরনাশিনী দেবী মহালক্ষ্মীর আরাধনাগীতিসুষমা দ্যাব্যা পৃথিবীতে পরিব্যাপ্ত হল।
মাগো, তব বীণে সঙ্গীত প্রেম ললিত।
নিখিল
প্রাণের বীণা তারে তারে রণিত।
সকল
রোদন সেই সুরে গেল মরিয়া।
কালি
কালি যত জমেছিল দুখযামিনী
ঊষার
মূরতি ধরিয়া বাহির রাগিনী।
জীবন
ছিল আলোকসুধায় ধরি তাই।
হে
দেবী চণ্ডিকা, তোমার পুণ্য স্তবগাথা ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য,
আরোগ্য, শত্রুহানি ও পরম মোক্ষলাভের উপায়।
তোমার স্তবমন্ত্রে মানবলোকে জাগরিত হোক ভূমানন্দের অপূর্ব প্রেরণা।
{শ্রীশ্রীচণ্ডী, একাদশ অধ্যায়— নারায়াণীস্তুতি,
শ্লোক- ৩-৩৫}
দেবি
প্রপন্নার্তিহরে প্রসীদ
প্রসীদ মাতর্জগতোঽখিলস্য ।
প্রসীদ
বিশ্বেশ্বরী পাহি বিশ্বং
ত্বমীশ্বরী দেবি চরাচরস্য ।। ৩
[হে ভক্ত-দুঃখ-হারিণি দেবি, আপনি প্রসন্না হউন। হে
নিখিলবিশ্বজননী, আপনি প্রসন্না হউন। হে বিশ্বেশ্বরি, আপনি প্রসন্না হইয়া জগৎ পালন করুন। হে দেবি, আপনি
চরাচর জগতের অধীশ্বরী।]
আধারভূতা
জগতস্ত্বমেকা
মহীস্বরূপেণ যতঃ স্থিতাসি ।
অপাং
স্বরূপস্থিতয়া ত্বয়ৈতৎ
আপ্যায্যতে কৃৎস্নমলঙ্ঘ্যবীর্যে ।। ৪
[হে অলঙ্ঘ্যবীর্যে, আপনি পৃথিবীরূপে বিরাজিতা বলিয়া
একাকিনীই জগতের আশ্রয়স্বরূপা। আপনিই জলরূপে অবস্থিতা হইয়া এই সমগ্র জগৎকে
পুরিতুষ্ট করিতেছেন। অতএব, আপনি সর্বাত্মিকা।]
ত্বং
বৈষ্ণবীশক্তিরনন্তবীর্যা
বিশ্বস্য বীজং পরমাসি মায়া ।
সম্মোহিতং
দেবি সমস্তমেতৎ
ত্বং বৈ প্রসন্না ভুবি মুক্তিহেতুঃ ।। ৫
[হে দেবি, আপনি অনন্তবীর্যা বৈষ্ণবী শক্তি (বিষ্ণুর
জগৎপালিনী শক্তি) । আপনি বিশ্বের আদিকারণ মহামায়া। আপনি সমগ্র জগৎকে মোহগ্রস্ত
করেছেন। আবার আপনিই প্রসন্না হইলে ইহলকে শরণাগত ভক্তকে মুক্তি প্রদান করেন।]
বিদ্যাঃ
সমস্তাস্তব দেবি ভেদাঃ
স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ সকলা জগৎসু।
ত্বয়ৈকয়া
পূরিতমম্বয়ৈতৎ
কা তে স্তুতিঃ স্তব্যপরাপরক্তিঃ ।। ৬
[হে দেবি, বেদাদি অষ্টাদশ বিদ্যা আপনারই অংশ।
চতুঃষষ্টি-কলাযুক্তা এবং পাতিব্রত্য, সৌন্দর্য ও তারুণ্যাদি
গুণান্বিতা সকল নারীই আপনার বিগ্রহ। আপনি জননীরূপা এবং একাকিনীই এই জগতের অন্তরে ও
বাহিরে পরিব্যাপ্ত হইয়া আছেন। স্তবনীয় বিষয়ে মুখ্য ও গৌণ উক্তির নাম স্তুতি। যখন
আপনি স্বয়ং সেইসকল উক্তিরূপা, তখন আপনার এইরূপ স্তুতি আর কি
হইতে পারে?]
সর্বভূতা
ইয়দা দেবী স্বর্গমুক্তিপ্রদায়িনী।
ত্বং
স্তুতা স্তুত্যে কা বা ভবন্তু পরমোক্তয়ঃ।। ৭
[আপনি সর্বভূতস্বরূপা, স্বর্গ- ও মুক্তি-দায়িনী এবং
প্রকাশরূপিণী (সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহাররূপ ক্রীড়াকারিণী) ।
এইরূপে যখন আপনার স্তব করা হয় তখন আপনার স্তবের উপযোগী বাক্য আর কি হইতে পারে?]
সর্বস্য
বুদ্ধিরূপেণ জনস্য হৃদি সংস্থিতে।
স্বর্গাপবর্গদে
দেবি নারায়ণি নমোঽস্তু তে।। ৮
[হে দেবি, আপনি সকল ব্যক্তির হৃদয়ে বুদ্ধিরূপে
অবস্থিতা এবং স্বর্গ- ও মুক্তি-দায়িনী নারায়ণী। আপনাকে প্রণাম করি।]
কলাকাষ্ঠাদিরূপেণ
পরিণাম্প্রদায়িনি।
বিশ্বস্যোপরতৌ
শক্তে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ৯
[হে দেবি, আপনি কলা, কাষ্ঠা,
ক্ষণমুহূর্তাদি সূক্ষ্ম কালরূপে জগতের পরিণামদায়িনী (অর্থাৎ
অখণ্ডকালরূপিণী) এবং জগতের সংহারসমর্থা শক্তিরূপিণী। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম করি।]
সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে
শিবে সর্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে
ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোঽস্তু তে।। ১০
[আপনি সর্বমঙ্গলস্বরূপা, সর্বাভীষ্টসাধিকা, একমাত্র শরণযোগ্যা, ত্রিভুবন-জননী (বা ত্রিনয়না=
সূর্যচন্দ্রাগ্নিলোচনা) ও গৌরবর্ণা। হে নারায়াণি, আপনাকে
প্রণাম।]
সৃষ্টিস্থিতিবিনাশানাং
শক্তিভূতে সনাতনী।
গুণাশ্রয়ে
গুণময়ে নারায়ণি নমোঽস্তু তে।। ১১
[হে দেবি, আপনি সৃষ্টি, স্থিতি
ও সংহারের শক্তিরূপিণী (অর্থাৎ শৈবী, বৈষ্ণবী ও ব্রাহ্মী) ।
আপনি সনাতনী ও ত্রিগুণের আধারভূতা (নির্গুণা), অথচ
ত্রিগুণময়ী। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
শরণাগতদীনির্তপরিত্রাণপরায়ণে।
সর্বস্যার্তিহরে
দেবি নারায়ণি নমোঽস্তু তে।। ১২
[হে দেবি, আপনি শরণাগত, দীন ও
আর্তগণের পরিত্ররাণ-পরায়ণা (সর্বাপৎনাশিনী বা মুক্তিদায়িনী) এবং সকলের দুঃখ
(জন্মমরণাদি)-নাশিনী। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
হংসযুক্তবিমানস্থে
ব্রহ্মাণিরূপধারিণী ।
কৌশাম্ভঃক্ষরিকে
দেবি নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ১৩
[হে দেবি, আপনি ব্রহ্মিণীরূপে হংসযুক্ত বিমানে
অবস্থিতা হইয়া কমণ্ডলু হইতে কুশ দ্বারা (প্রণবপূত) জল সিঞ্চন করেন। হে নারায়াণি,
আপনাকে প্রণাম।]
ত্রিশূলচন্দ্রাহিধরে
মহাবৃষভবাহিনি ।
মাহেশ্বরীস্বরূপেণ
নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ১৪
[হে দেবি, আপনি ত্রিশূল, অর্ধচন্দ্র
অ সর্প ধারণ করেন এবং মহাবৃষ আপনার বাহন। আপনি মহেশ্বর-শক্তিরূপা। হে নারায়াণি,
আপনাকে প্রণাম।]
ময়ূরকুক্কুটবৃতে
মহাশক্তিধরেঽনঘে ।
কৌমারীরূপসংস্থানে
নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ১৫
[হে দেবি। আপনি ময়ূর- ও কুক্কুট-বেষ্টিতা মহাশক্তি-ধারিণী, অপাপবিদ্ধা (নিত্যশুদ্ধা) ও কুমার-শক্তিরূপিণী। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
শঙ্খচক্রগদাশার্ঙ্গগৃহীতপরমায়ুধে
।
প্রসীদ
বৈষ্ণবীরূপে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ১৬
[হে দেবি, আপনি বিষ্ণুশক্তিরূপে চারি হস্তে শঙ্খ,
চক্র, গদা ও শার্ঙ্গ (ধনু বা খড়্গ) এই চারি
মহাস্ত্র ধারণ করেন। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
গৃহীতোগ্রমহাচক্রে
দংষ্ট্রোদ্ধৃতবসুন্ধরে ।
বরাহরূপিণি
শিবে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।১৭
[হে দেবি, আপনি ভীষণ-মহাচক্রধারিণী এবং বরাহরূপে
জলমগ্না পৃথিবীকে উদ্ধারকারিণী। আপনি মঙ্গলময়ী। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
নৃসিংহরূপেণ
হন্তুং দৈত্যান্ কৃতোদ্যমে ।
ত্রৈলোক্যত্রাণসহিতে
নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ১৮
[হে দেবি, ভয়ঙ্করী নরসিংহমূর্তি ধারণ করিয়া আপনি
দৈত্যবিনাশে উদ্যতা হইয়াছিলেন এবং আপনিই ত্রিভুবন রক্ষা করেন। হে নারায়াণি,
আপনাকে প্রণাম।]
কিরীটিনি
মহাবজ্রে সহস্রনয়নোজ্জ্বলে ।
বৃত্রপ্রাণহরে
চৈন্দ্রী নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ১৯
[দেবি, আপনি মুকুটযুক্তা, মহাবজ্রধারিণী,
সহস্র-নয়ন-শোভিতা, বৃত্রাসুর-নাশিনী এবং
ইন্দ্র-শক্তিস্বরূপা। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
শিবদূতীস্বরূপেণ
হতদৈত্যমহাবলে ।
ঘোররূপে
মহারাবে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ২০
[দেবি, শিবদূতীরূপে আপনি বিশাল-অসুর-সৈন্য-নাশিনী।
আপনি ভয়ঙ্করমূর্তিধারিণী ও মহাগর্জনকারিণী। হে নারায়াণি, আপনাকে
প্রণাম।]
দংষ্ট্রাকরালবদনে
শিরোমালাবিভূষণে ।
চামুণ্ডে
মুণ্ডমথনে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ২১
[চামুণ্ডে, আপনি বিকটদন্তবিশিষ্ট-ভীষণবদনা, নরমুণ্ডমালিনী ও মুণ্ডাসুরনাশিনী। হে নারায়াণি, আপনাকে
প্রণাম।]
লক্ষ্মি
লজ্জে মহাবিদ্যে শ্রদ্ধে পুষ্টি স্বধে ধ্রুবে ।
মহারাত্রি
মহামায়ে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ২২
[দেবি, আপনিই লক্ষ্মী, লজ্জা,
ব্রহ্মবিদ্যা, শ্রদ্ধা, পুষ্টি
ও স্বধাস্বরূপিণী (মন্ত্ররূপিণী)। আপনি নিত্যা (সনাতনী) মহাপ্রলয়রূপা রাত্রি ও
মহামোহরূপা অবিদ্যা। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
মেধে
সরস্বতি বরে ভূতি বাভ্রবি তামসি ।
নিয়তে
ত্বং প্রসীদেশে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।। ২৩
[দেবি, আপনি মেধারূপা, বাগ্দেবী,
সর্বশ্রেষ্ঠা, সাত্ত্বিকী, রাজসী, তামসী, দৈবশক্তি এবং
ঈশ্বরী। আপনি প্রসন্না হউন। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
সর্বস্বরূপে
সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে ।
ভয়েভ্যস্ত্রাহি
নো দেবি দুর্গে দেবি নমোঽস্তু তে ।। ২৪
[দেবি, আপনি সর্ব-কার্য-ও কারণ-রূপিণী, সর্বেশ্বেরী, সর্বশক্তিময়ী ও দুর্জ্ঞেয়া। দেবি,
আপনি আমাদিগকে সকল আপদ হইতে রক্ষা করুন। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
এতৎ
তে বদনং সৌম্যং লোচনত্রয়ভূষিতম্ ।
পাতু
নঃ সর্বভূতেভ্যঃ কাত্যায়নি নমোঽস্তু তে ।। ২৫
[কাত্যায়নি, আপনার ত্রিনয়নশোভিত সৌম্য বদন আমাদিগকে
সকল ভৌতিক বিকার ও সর্বভূতের উপদ্রব হইতে রক্ষা করুক। হে নারায়াণি, আপনাকে প্রণাম।]
জ্বালাকরালমত্যুগ্রমশেষাসুরসূদনম্
।
ত্রিশূলং
পাতু নো ভীতেভদ্রকালি নমোঽস্তু তে ।। ২৬
[হে ভদ্রকালি, প্রচণ্ডদীপ্যমান, অতিতীক্ষ্ণ, অসংখ্য অসুরনাশক আপনার ত্রিশূল আমাদিগকে
সকল প্রকার ভয় হইতে রক্ষা করুক। আপনাকে প্রণাম।]
হিনস্তি
দৈত্যতেজাংসি স্বনেনাপূর্য যা জগৎ ।
সা
ঘন্টা পাতু নো দেবি পাপেভ্যোঽনঃ সুতানিব ।। ২৭
[দেবি, আপনার যে ঘণ্টাধ্বনি জগৎ পরিপূর্ণ করিয়া
দৈত্যতেজ হরণ করে, তাহা— মাতা যেমন পুত্রকে অমঙ্গল হইতে
রক্ষা করেন— সেইরূপ আমাদিগকে সকল পাপ হইতে রক্ষা করুক।]
অসুরাসৃগ্বসাপঙ্কচর্চিতস্তে
করোজ্জ্বলঃ ।
শুভায়
খড়্গ ভবতু চণ্ডিকে ত্বাং নতা বয়ম্ ।। ২৮
[চণ্ডিকে, আপনার হস্তস্থিত তেজোমর এবং অসুরের
রক্তসিক্ত ও মেদলিপ্ত খড়্গ মাদের কল্যাণসাধন করুক। আপনাকে আমরা প্রণাম করি।]
রোগানশেষানপহংসি
তুষ্টা
রুষ্টা তু কামান্ সকলানভীষ্টান ।
ত্বামাশ্রিতানাং
ন বিপন্নরাণাং
ত্বামাশ্রিতা হ্যাশ্রয়তাং প্রয়ান্তি ।।
২৯
[দেবি, আপনি সন্তুষ্ট হইলে সকল প্রকার (দৈহিক অ
মানসিক) রোগ বিনাশ করেন। আবার রুষ্টা হইলে অভীষ্ট (কাম্য) বস্তুসমূহ নাশ করেন।
আপনার আশ্রিত ব্যক্তিদিগের বিপদ স্থায়ি হয় না। যাঁহারা আপনার চরণাশ্রিত, তাঁহারা অন্যের আশ্রয়যোগ্য হন।]
এতং
কৃতং যৎ কদনং ত্বয়াদ্য
ধর্মদ্বিষাং দেবি মহাসুরাণাম্ ।
রূপৈরনেকৈর্বহুধাত্মমূর্তিং
কৃত্বাম্বিকে তৎ প্রকরোতি কান্যা ।। ৩০
[দেবি, সম্প্রতি আপনি ব্রাহ্মী প্রভৃতি ও কালী আদি
মূর্তিতে স্বীয় স্বরূপ বহু প্রকারে প্রকটিত করিয়া ধর্মদ্বেষী মহাসুরগণের এই যে
বিনাশসাধন করিলেন, অম্বিকে, তাহা আপনি
ভিন্ন অন্য কাহার দ্বারা সম্ভব হইত?]
বিদ্যাসু
শাস্ত্রেষু বিবেকদীপে-
ষ্বাদ্যেষু বাক্যেষু চ কা ত্বদন্যা ।
মমত্বগর্তেঽতিমহান্ধকারে
বিভ্রাময়ত্যেতদতীব বিশ্বম্ ।। ৩১
[দেবি, সকল ঐহিক বিদ্যায়, মনুস্মৃত্যাদি
প্রবৃত্তিপর ধর্মশাস্ত্রসমূহে এবং নিবৃত্তিপর বেদান্তবাক্যসকলে মানুষকে আপনি ভিন্ন
আর কে প্রবর্তিত করে? দেবি, গভীর
অজ্ঞানরূপ অন্ধকার ও মমতাপূর্ণ সংসারগর্তে মানুষকে আপনি ব্যতীত আর কে পুনঃ পুনঃ
ভ্রমণ করাইতে পারে?]
রক্ষাংসি
যত্রোগবিষাশ্চ নাগা
যত্রারয়ো দস্যুবলানি যত্র ।
দাবানলো
যত্র তথাব্ধিমধ্যে
তত্র স্থিতা ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্ ।। ৩২
[যেখানে রাক্ষস, যেখানে তীব্র বিষধর সর্প, যেখানে শত্রু ও দস্যুদল সেখানে ও সমুদ্রবক্ষে— সর্বত্র আপনি সদা বিরাজিতা
থাকিয়া বিশ্ব পরিপালন করেন।]
বিশ্বেশ্বরি
ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্
বিস্বাত্মিকা ধারয়সীতি বিশ্বম্ ।
বিশ্বেশবন্দ্যা
ভবতী ভবন্তি
বিশ্বাশ্রয়া যে ত্বয়ি ভক্তিনম্রাঃ ।। ৩৩
[হে জগদীশ্বরী, আপনি বিশ্ব পরিপালন করেন। আপনি
বিশ্বরূপা, আপনি বিশ্ব ধারণ করেন। আপনি ব্রহ্মাদিরও
বন্দনীয়া। যাঁহারা ভক্তিপূর্বক আপনার শরণাগত হন, তাঁহারা
বিশ্বের আশ্রয়স্থল হন।]
দেবি
প্রসীদ পরিপালয় নোঽরিভীতেঃ
নিত্যং যথাসুরবধাদধুনৈব সদ্যঃ ।
পাপানি
সর্বজগতাঞ্চ শমং নায়াশু
উৎপাতপাকজনিতাংশ্চ মহোপসর্গান্ ।। ৩৪
[দেবি, আমাদিগের প্রতি প্রসন্না হউন। সম্প্রতি
স্মরণমাত্রই আপনি যেরূপ অসুরনাশ করিয়া আমাদিগকে রক্ষা করিলেন, সেইরূপ ভবিষ্যতেও আপনি সর্বদা আমাদিগকে শত্রুভয় হইতে রক্ষা করিবেন। দেবি,
আপনি কৃপা করিয়া জগতের সমস্ত পাপ ও অধর্মের পরিণামে উৎপন্ন
দুর্ভিক্ষ ও মহামারী প্রভৃতি উপদ্রবসকল শীঘ্র নাশ করুন।]
প্রণতানাং
প্রসীদ ত্বং দেবি বিশ্বার্তিহারিণি ।
ত্রৈলোক্যবাসিনামীড্যে
লোকানাং বরদা ভবঃ ।। ৩৫
[হে বিশ্বার্তিহারিণী দেবি, আপনি আমাদিগের প্রতি
প্রসন্না হউন। ত্রিভুবনবাসিগণের আরাধ্যা দেবি, আপনার চরণে
প্রণত জনগনের প্রতি আপনি বরদা হউন।]
বিমানে
বিমানে আলোকের গানে জাগিল ধ্বনি।
তব
বীণা তারে সে সুর বিহারে কি জাগরণে।
অরুণ
রবি যে নিখিল রাঙালো,
পূর্ব
আঁচলে তন্দ্রা ভাঙালো,
রাঙা
হিল্লোলে ধরণী যে দোলে নূপুররণি।
দেবীর
অক্ষয় কৃপাকণা পেয়ে সপ্তলোক আনন্দিত।
প্রথম
কল্পে দেবী কাত্যায়ান-নন্দিনী কাত্যায়নী, অষ্টাদশভুজা
উগ্রচণ্ডারূপে মহিষমর্দন করেন;
দ্বিতীয়
ষোড়শভুজা ভদ্রকালীর হতে মর্দিত হয় মহিষ;
আর
তৃতীয়ৈঃ বর্তমানকল্পে দশভুজা দুর্গারূপে মহাদেবী সুসজ্জিতা মহিষমর্দিনী।
অখিল
মানবকণ্ঠে ধ্বনিত পুষ্পাঞ্জলি স্তোত্রবন্দনা—
{শ্রীশ্রীমহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্রম্, শ্লোক – ৯,
১০, ১৮}
জয়
জয় জপ্য জয়ে জয় শব্দ পরস্তুতি তৎপর বিশ্বনুতে
ঝণঝণ
ঝিংঝিমি ঝিংকৃতনূপুর শিঞ্জিতমোহিত ভূতপতে ।
নটিত
নটার্ধ নটী নট নায়ক নাটিতনাট্য সুগানরতে
জয়
জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে ।। ৯
[তোমার উদ্দেশ্যে গীত বিশ্বের বন্দনাগান রণক্ষেত্রে উত্থিত তোমার জয়ধ্বনি ও
তোমার (উদ্দেশ্যে দেবতাদের) স্তুতিগানের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে; তোমার
পায়ের নূপুরের ঝনঝন ঝঙ্কারধ্বনিতে দেবাদিদেব শিবও মুগ্ধ। তমার এই বিজয় অভিজান
উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত নট, নটী ও নায়কদ্বারা অনুষ্ঠিত
নৃত্যগীতাদি ও সুমধুর সঙ্গীত অ বাদ্যধ্বনি মুখরিত অভিনীত নাট্যানুষ্ঠানে তুমি
আনন্দিত হও। হে হিমালয়দুহিতা, সুন্দর জটাজূটধারিণী পার্বতী,
তুমিই মহিষাসুর সংহার করেছ, তোমার জয় হোক।]
অয়ি
সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনোহর কান্তিযুতে
শ্রিতরজনী
রজনী রজনী রজনী রজনীকর বক্ত্রবৃতে ।
সুনয়ন
বিভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমরাধিপতে
জয়
জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে ।। ১০
[হে মাতঃ! সহৃদয় দিব্যধামবাসীগণের উদ্যানে প্রস্ফুটিত পারিজাত পুষ্পের
লোভনীয় উজ্জ্বলতার অধিকারিণী তোমার মুখমণ্ডল চন্দ্রের জ্যোৎস্নায় আলোকিত হয়ে তারই
মত সুন্দর, তমার নয়নযুগল ভ্রমরাক্ষিসদৃশ, তোমার কণ্ঠে শোভমান যে পুষ্পমাল্যতা ভ্রমরে ভ্রমরে আচ্ছাদিত থাকায় তুমি
নিজেই ‘ভ্রমর’ নামধেয়া অথবা ‘ভ্রমরদের’ ঈশ্বরীরূপে পরিগণিতা। হে হিমালয়দুহিতা,
সুন্দর জটাজূটধারিণী পার্বতী, তুমিই মহিষাসুর
সংহার করেছ, তোমার জয় হোক।]
কনকলসৎকল
সিন্ধুজলৈরনুষিঞ্চতি তে গুণরঙ্গভুবং
ভজতি
স কিং ন শচীকুচকুম্ভ তটীপরিরম্ভ সুখানুভবম্ ।
তব
চরণং শরণং করবাণি নতামরবাণি নিবাসি শিবম্
জয়
জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে ।। ১৮
[হে মাতঃ! যে ভক্তগণ স্বর্ণাভবিচ্ছুরিত সিন্ধুবারি দিয়ে সিঞ্চন করে দেয়
তোমার বেদি, তারা কি ইন্দ্রপত্নী সচীর মতো সুন্দরী ললনার
বাহুবেষ্টনের সুখানুভূতিলাভের যোগ্য নয়? কিন্তু (তার
আকাঙ্ক্ষা না করে)বাগ্দেবী সরস্বতী কর্তৃক সেবিত মঙ্গলবিধায়ক তোমার শ্রীচরণযুগলের
আমি শরণ গ্রহণ করি। হে হিমালয়দুহিতা, সুন্দর জটাজূটধারিণী
পার্বতী, তুমিই মহিষাসুর সংহার করেছ, তোমার
জয় হোক।]
{শ্রীশ্রীচণ্ডী, পঞ্চম অধ্যায়— দেবীদূতসংবাদ, শ্লোক – ৯-৮০}
নমো
দেব্যৈ মহাদেব্যৈ শিবায়ৈ সততং নমঃ ।
নমঃ
প্রকৃতৈ ভদ্রায়ৈ নিয়তাঃ প্রণতাঃ স্ম তাম্ ।। ৯
[দেবীকে, মহাদেবীকে প্রণাম। সতত মঙ্গলদায়িনীকে
প্রণাম। সৃষ্টিশক্তিরূপিণী প্রকৃতিকে প্রণাম। স্থিতিশক্তিরূপিণী ভদ্রাকে প্রণাম।
আমরা সমাহিত চিত্তে তাঁহাকে বার বার প্রণাম করি।]
রৌদ্রায়ৈ
নমো নিত্যায়ৈ গৌর্যৈ ধাত্র্যৈ নমো নমঃ ।
জ্যোৎস্নায়ৈ
চেন্দুরূপিণ্যৈ সুখায়ৈ সততং নমঃ ।। ১০
[রৌদ্রাকে (সংহারশক্তিকে) প্রণাম। নিত্যাকে (ত্রিকালাতীত সত্তারূপিণীকে)
প্রণাম। গৌরী জগদ্ধাত্রীকে প্রণাম। জ্যোৎস্নারূপা, চন্দ্ররূপা
ও সুখস্বরূপাকে সতত প্রণাম।]
কল্যাণ্যৈ
প্রণতা বৃদ্ধ্যৈ সিদ্ধ্যৈ কুর্মো নমো নমঃ ।
নৈঋত্যৈ
ভুভৃতাং লক্ষ্ম্যৈ শর্বাণ্যৈ তে নমো নমঃ ।। ১১
[কল্যাণীকে প্রণাম করি। বৃদ্ধিরূপা ও সিদ্ধিরূপাকে পুনঃ পুনঃ প্রণাম করি। অলক্ষ্মীরূপা,
ভূপতিগণের লক্ষ্মীরূপা শর্বাণী আপনাকে বার বার প্রণাম করি।]
দুর্গায়ৈ
দুর্গপারায়ৈ সারায়ৈ সর্বকারিণ্যৈ ।
খ্যাত্যৈ
তথৈব কৃষ্ণায়ৈ ধূম্রায়ৈ সততং নমঃ ।। ১২
[দুস্তর-ভবসমুদ্র-পার-কারিণী, শক্তিরূপিণী, সৃষ্টিকর্ত্রী, খ্যাতি (বা প্রকৃতি-পুরুষের ভেদ বা
প্রসিদ্ধি)-রূপিণী কৃষ্ণবর্ণা ও ধূম্রবর্ণা দুর্গাদেবীকে সতত প্রণাম করি।]
অতিসৌম্যাতিরৌদ্রায়ৈ
নতাস্তস্যৈ নমো নমঃ ।
নমো
জগৎপ্রতিষ্ঠায়ৈ দেব্যৈ কৃত্যৈ নমো নমঃ ।। ১৩
[যিনি বিদ্যারূপে অতি সৌম্যা এবং অবিদ্যারূপে অতি রৌদ্রা (অতি ভীষণা)
তাঁহাকে পুনঃ পুনঃ প্রণাম। জগতের আশ্রয়রূপিণীকে প্রণাম। ক্রিয়ারূপিণী দেবীকে পুনঃ
পুনঃ প্রণাম।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা ।
নমস্তস্যৈ
(১৪) নমস্তস্যৈ (১৫) নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ১৬
[যে দেবী সকল প্রাণীতে বিষ্ণুমায়া নামে (আগমশাস্ত্রে) অভিহিতা হন, তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার, নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ১৭-১৯
[যে দেবী সর্বভূতে চেতনারূপে প্রসিদ্ধা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু বুদ্ধিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ২০-২২
[যে দেবী সর্বভূতে বুদ্ধিরূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু নিদ্রারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ২৩-২৫
[যে দেবী সর্বভূতে নিদ্রারূপে বিরাজিতা তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার।
তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার, নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু ক্ষুধারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ২৬-২৮
[যে দেবী সর্বভূতে ক্ষুধারূপে অবস্থিতা তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার।
তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার, নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু ছায়ারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ২৯-৩১
[যে দেবী সর্বপ্রাণীতে ছায়ারূপে বিরাজমানা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৩২-৩৪
[যে দেবী সর্বপ্রাণীতে শক্তিরূপে অধিষ্ঠিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু তৃষ্ণারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৩৫-৩৭
[যে দেবী সর্বভূতে তৃষ্ণা (বিষয়-বাসনা)-রূপে সংস্থিতা, তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার, নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু ক্ষান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৩৮-৪০
[যে দেবী সর্বভূতে ক্ষমারূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু জাতিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৪১-৪৩
[যে দেবী সর্বভূতে জাতিরূপে সংস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু লজ্জারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৪৪-৪৬
[যে দেবী সর্বভূতে লজ্জারূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৪৭-৪৯
[যে দেবী সর্বপ্রাণীতে শান্তিরূপে সংস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু শ্রদ্ধারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৫০-৫২
[যে দেবী সর্বভূতে শ্রদ্ধারূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু কান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৫৩-৫৫
[যে দেবী সর্বপ্রাণীতে কান্তিরূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু লক্ষ্মীরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৫৬-৫৮
[যে দেবী সর্বপ্রাণীতে লক্ষ্মীরূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু বৃত্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৫৯-৬১
[যে দেবী সর্বভূতে (কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্যাদি)
বৃত্তি (জীবিকা)-রূপে সংস্থিতা, তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার, নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু স্মৃতিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৬২-৬৪
[যে দেবী সর্বভূতে স্মৃতিরূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু দয়ারূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৬৫-৬৭
[যে দেবী সর্বপ্রাণীতে দয়ারূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু তুষ্টিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৬৮-৭০
[যে দেবী সর্বভূতে সন্তোষরূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৭১-৭৩
[যে দেবী সর্বপ্রাণীতে মাতৃরূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
যা
দেবী সর্বভূতেষু ভ্রান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৭৪-৭৬
[যে দেবী সর্বপ্রাণীতে মাতৃরূপে অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
ইন্দ্রিয়াণামধিষ্ঠাত্রী
ভূতনাঞ্চাখিলেষু যা।
ভূতেষু
সততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমো নমঃ ।। ৭৭
[যিনি সকল প্রাণীতে চতুর্দশ ইন্দ্রিয়ের অধিষ্ঠাত্রী দেবতারূপে বিরাজিতা এবং
যিনি পৃথিবী আদি পঞ্চ স্থূল ও পঞ্চ সূক্ষ্ম ভূতের প্রেরয়ত্রী, সেই বিশ্বব্যাপিকা ব্রহ্মশক্তিরূপা দেবীকে পুনঃ পুনঃ প্রণাম।]
চিতিরূপেণ
যা কৃৎস্নমেতদ্ ব্যাপ্যা স্থিতা জগৎ ।
নমস্তস্যৈ
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। ৭৮-৮০
[যিনি চিৎশক্তিরূপে এই সমগ্র জগৎ ব্যাপিয়া অবস্থিতা, তাঁহাকে
নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার। তাঁহাকে নমস্কার, নমস্কার,
নমস্কার।]
হে
চিন্ময়ী,
হিমগিরি থেকে এলে,
এলে
তারে রেখে নির্মল প্রাতে।
বসুন্ধরা
যে সুবিমল সাজে অঞ্জলি হাতে।
নবনীলিমায়
বাজে মহাভেরী,
দিকে
দিকে তব মাধুরি যে হেরি,
সুললিত
তালে তালে সুধা আনে আলোকেরি সাথে।
সাজাব
যে ডালা,
গাঁথিব যে মালা জ্যোতির মন্ত্রে,
তাই
অন্তরে অমৃত যে ভরে পুলক তন্ত্রে।
বাণী
মহাবর অম্লান মনে,
জননী
গো নমি রাতুল চরণে,
পূজায়
উল্লাসে ধরণী যে হাসে সুরভিত বাতে।
শ্রীশ্রীচণ্ডিকা
গুণাতীতা ও গুণময়ী।
সগুণ
অবস্থায় দেবী চণ্ডিকা অখিলবিশ্বের প্রকৃতিস্বরূপিণী।
তিনি
পরিণামিনী নিত্যার্দিভ্যর্চৈতন্যসৃষ্টিপ্রক্রিয়ায়
(নিত্যঃ-আদিভ্যঃ-চৈতন্য-সৃষ্টি-প্রক্রিয়ায়) যে শক্তির মধ্য দিয়ে ক্রিয়াশীলরূপে
অভিব্যক্ত হন, সেই শক্তি বাক্ অথবা সরস্বতী;
তাঁর
স্থিতিকালোচিত শক্তির নাম শ্রী বা লক্ষ্মী;
আবার
সংহারকালে তাঁর যে শক্তির ক্রিয়া দৃষ্ট হয় তা-ই রুদ্রাণী দুর্গা।
একাধারে
এই ত্রিমূর্তির আরাধনাই দুর্গোৎসব।
এই
তিন মাতৃমূর্তির পূজায় আরত্রিকে মানবজীবনের কামনা, সাধনা সার্থক হয়,
চতুর্বর্গ (ধর্ম, অর্থ, কাম,
মোক্ষ) লাভ করে মর্তলোক।
অমল
কিরণে ত্রিভুবন-মন-হারিণী।
হেরিনু
তোমার রূপে করুণা নাবনী,
নমি
নমি নমি নিখিল চিতচারিণী,
জাগো
পুলক নিত্য নূপুরে জননী।
তোমারেই
পূজিছে দেবদেবী দ্বারে দ্বারে,
রাগিণী
ধ্বনিছে আকাশবীণার তারে,
তনু-মন-প্রাণ
নিবেদি তোমারে মনে।
প্রেম
সুর ধন পূজা রূপের এ ধরণী
নমি
জগতের সকল ক্ষেমকারিণী
লভিনু
তোমার প্রেমে করুণা লাবণি।
ষড়ৈশ্বর্যময়ী
দেবী নিত্যা হয়েও বারংবার আবির্ভূতা হন।
তিনি
জগৎকে রক্ষা ও প্রতিপালন করেন।
দেবীর
করুণা অসীম;
বিধাতৃ
বরদার করুণার পুণ্যে বিশ্বনিখিল বিমোহিত;
অমৃতরসবর্ষিণী
মহাদেবীর অমল রূপের সুষমা প্রতিভাত ধরিত্রীর ধ্যান গরিমায়।
{অর্গলা স্তোত্র, শ্লোক- ২, ৩,
৪, ৮, ৯, ১০, ১৩, ১৪, ২৪, ২৬}
জয়ন্তী
মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী ।
দুর্গা
শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে ।। ২
[হে দেবী, তুমি জয়ন্তী (জয়যুক্তা বা সর্বোৎকৃষ্টা),
মঙ্গলা (জন্মাদিনাশিনী); কালী (সর্বসংহারিণী),
ভদ্রকালী (মঙ্গল-দায়িনী), কপালিনী (প্রলয়কালে
ব্রহ্মাদির কপাল হস্তে বিচরণকারিণী), দুর্গা (দুঃখপ্রাপ্যা),
শিবা (চিৎস্বরূপা), ক্ষমা (করুণাময়ী), ধাত্রী (বিশ্বধারিণী), স্বাহা (দেবপোষিণী) এবং স্বধা
(পিতৃতোষিণী)-রূপা, তোমাকে নমস্কার।]
মধুকৈটভবিধ্বংসি
বিধাতৃ-বরদে নমঃ।
রূপং
দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ৩
[হে মধুকৈটভনাশিনি, হে ব্রহ্মাবরদায়িনি তোমাকে
নমস্কার। আমাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ
দাও এবং আমার (কাম-ক্রোধাদি) শত্রু নাশ কর।]
মহিষাসুরনির্ণাশি
ভক্তনাং সুখদে নমঃ ।
রূপং
দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ৪
[হে মহিষাসুরনাশিনি ও ভক্তগণের সুখদায়িনি, তোমাকে
নমস্কার। আমাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ
দাও এবং আমার শত্রু নাশ কর।]
বন্দিতাঙ্ঘ্রিযুগে
দেবি সর্বসৌভাগ্যদায়িনি ।
রূপং
দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ৮
[হে মহিষাসুরনাশিনি ও ভক্তগণের সুখদায়িনি, তোমাকে
নমস্কার। আমাকে রূপ দাও, জয় দাও, যশ
দাও এবং আমার শত্রু নাশ কর।]
অচিন্ত্যরূপচরিতে
সর্বশত্রুবিনাশিনি ।
রূপং
দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ৯
[হে অচিন্ত্য-রূপ-চরিত্রে সর্বশত্রুবিনাশিনি দেবি, আমায়
রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং আমার
শত্রু নাশ কর।]
নতেভ্যঃ
সর্বদা ভক্ত্যা চাপর্ণে দুরিতাপহে ।
রূপং
দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ১০
[হে অর্পণে, আশ্রিত ভক্তের পাপনাশিনি হে দেবি,
আমায় রূপ দাও, জয় দাও, যশ
দাও এবং আমার শত্রু নাশ কর।]
দেহি
সৌভাগ্যমারোগ্যং দেহি দেবি পরং সুখম্ ।
রূপং
দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ১৩
[হে দেবি, আমায় সৌভাগ্য ও আরোগ্য দাও এবং পরম সুখ
দাও। আমায় রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং
আমার শত্রু নাশ কর।]
বিধেহি
দেবি কল্যাণং বিধেহি বিপুলাং শ্রিয়ম্ ।
রূপং
দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ১৪
[হে দেবি, আমার কল্যাণ বিধান কর এবং আমাকে বিপুল শ্রী
(ঐশ্বর্য) প্রদান কর। আমায় রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও এবং আমার শত্রু নাশ কর।]
দেবি
ভক্তজনোদ্দাম-দত্তানন্দদয়েঽম্বিকে ।
রূপং
দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ২৪
[হে দেবি, ভক্তজনের হৃদয়ে অপার-আনন্দদয়কারিণি হে
অম্বিকে, আমায় রূপ দাও, জয় দাও,
যশ দাও এবং আমার শত্রু নাশ কর।]
তারিণি
দুর্গসংসার-সাগরস্যাচলোদ্ভবে ।
রূপং
দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।। ২৬
[দুস্তর-সংসার-সাগরতারিণি হে গিরিসুতে, আমায় রূপ দাও,
জয় দাও, যশ দাও এবং আমার শত্রু নাশ কর।]
বিশ্বপ্রকৃতি
মহাদেবী দুর্গার চরণে চিরন্তনী ভৈরব ধ্যানরতা পূজারিণী ভৈরবীতে গীতাঞ্জলী প্রদান
করে ধন্যা হলেন।
তাঁর
গীতবাণী আজ অনিলে সুনীলে নবীন জননোদয়ে দিকে দিকে সঞ্চারিত।
শান্তি
দিলে ভরি।
দুখরজনী
গেল তিমির হরি।
প্রেমমধুর
গীতি
বাজুক
হৃদে নিতি নিতি মা।
প্রাণে
সুধা ঢালো
মরি
গো মরি।
শিল্পীবৃন্দ—
যা
চণ্ডী – সমবেতকণ্ঠে
সিংহস্থা
শশিশেখরা – সমবেতকণ্ঠে
বাজল
তোমার আলোর বেণু – সুপ্রীতি ঘোষ
জাগো
দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী – দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়
ওগো
তোমার আগমনীর আলো – শিপ্রা বোস
তব
অচিন্ত্য – মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
অহং
রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরাম্যহম্ – সমবেতকণ্ঠে
অখিল
বিমানে – কৃষ্ণা দাশগুপ্ত
জয়ন্তী
মঙ্গলা কালী – সমবেতকণ্ঠে
শুভ্র
শঙ্খরবে – শ্যামল মিত্র, অসীমা ভট্টাচার্য্য, আরতি মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্য
জটাজূটসমাযুক্তামর্ধেন্দুকৃতশেখরাম্ – সমবেতকণ্ঠে
নমো
চণ্ডী – বিমল ভূষণ
মাগো, তব বীণে সঙ্গীত – সুমিত্রা সেন
বিমানে
বিমানে – সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
জয়
জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি – সমবেতকণ্ঠে
হে
চিন্ময়ী – তরুণ ব্যানার্জ্জী
অমল
কিরণে – প্রতিমা ব্যানার্জ্জী
রূপং
দেহি জয়ং দেহি – পঙ্কজ কুমার মল্লিক ও
অন্যান্য
শান্তি
দিলে ভরি – উৎপলা সেন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন