নামটা পড়েই চমকে উঠেছিলাম। শুধু যে
অদ্ভুত তা-ই নয়, নামটির মধ্যে কেমন যেন একটা রোমান্টিকতা খুজে পাচ্ছিলাম যদিও জানতাম
মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন মোটেও কোন রোমান্টিক উপন্যসের লেখক নয়। এর আগে এই লেখকের “কেউ
কেউ কথা রাখে” বইটা পড়েছিলাম। এই বইটা পড়েও বেশ অবাক হয়েছিলাম। কেউ কেউ কথা রাখে- এমন
একটি রোমান্টিক নামের আড়ালে কি ভয়ংকর এক থ্রিলার!
যা হোক পড়া শুরু করতেই যেন টুপ করে
বইয়ের ভেতর ডুবে গেলাম। বাংলাদেশের সুন্দরপুর নামে একটি ছোট শহরের অদূরে “রবীন্দ্রনাথ
এখানে কখনও খেতে আসেননি” নামে একটি রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ অসাধারণ!
সুদূর ঢাকা থেকেও অনেকে ছুটে যান সেই খাবারের স্বাদ নিতে। নূরে ছফা নামে বাংলাদেশ পুলিশের
উচ্চ পদস্ত এক গোয়েন্দা যিনি হাসিব নামে এক যুবকের হঠাৎ নিরুদ্দেশ হওয়ার তদন্ত করতে
এই সুন্দরপুরে গিয়ে পৌছান। অদ্ভুত নামের রেস্টুরেন্ট খেতে গিয়ে নূরে ছফা আরো কিছু অদ্ভুত
বিষয় আবিষ্কার করেন। এই রেস্টুরেন্টের মালিক মুশকান জাবেরি নামে এক অদ্ভুত মহিলা, তিনি
আবার সুন্দরপুরের এক হিন্দু জমিদারের নাতবৌ। আশেপাশের মানুষ মুশকান জুবেরীকে ডাইনী
মনে করেন। অনেকে নাকি তাকে রাতের বেলায় মানুষের রক্ত পান করতে দেখেছেন।
আতর আলী নামে এক পুলিশের সোর্স নূরে
ছফা কে পরিচয় করিয়ে দেন রমাকান্তকামার নামে সুন্দরপুরের এক স্কুল মাস্টারের সাথে। এই
রমাকান্তকামারের কাছে থেকে নূরে ছফা এমন কিছু তথ্য জানতে পারেন যা তাকে আরো রহস্যের
অলিগলিতে নিয়ে যায়। তদন্তের এক পর্যায়ে জনাব ছফা আবিষ্কার করেন শুধুমাত্র হাসিবই নয়
এরকম আরো কিছু যুবক বিভিন্ন সময়ে রবীন্দ্রনাথে খেতে এসে নিরুদ্দেশ হয়েছেন এবং অদ্ভুতভাবে
নিরুদেশ হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই তাদের ফেসবুক আইডি মুছে ফেলা বা ডিএক্টিভ করা হয়েছে।
তবে সর্বশেষ হাসিবের ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভ করতে পারেনী আততায়ী। হাসিবের আইডি থেকেই
নূরের ছফা জানতে পারেন চারুলতা নামে একটি আইডির সাথে হাসিবের ঘনিষ্ঠতা ছিল।
শেষ দিকে গিয়ে
এক ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসে। মুশকান জুবেরি যার প্রকৃত নাম নাকি মুশকান সোহেলী ১৯৭২ সালের
আগে আমেরিকায় পড়াশুনা করতে গিয়েছিলেন। আন্দিজ পর্বতামালায় শিক্ষা সফরে গিয়ে এক প্লেন
দূর্ঘটনার শিকার মুশকান সোহেলী। ১০২ জন যাত্রীর মধ্যে বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবান ১৮ যাত্রীর
তিনি একজন। তবে উদ্ধার হওয়ার আগে এই ১৮ জন যাত্রী দীর্ঘ প্রায় ৮০ দিন বরফঢাকা পাহাড়ে
তাদেরই প্লেন ক্রাশে নিহত মানুষের মাংস খেয়ে বেঁচে ছিলেন। আরো ভয়ংকর তথ্য হল মানুষের
শরীরের একটা বিশেষ অঙ্গ খাওয়ার কারণে মুশকান জুবেরির শরীরে একদমই বয়সের ছাপ পড়েনি অর্থাৎ
সেই ১৯৭২ সালে তিনি যে তরুণী ছিলেন এখনও প্রায় তেমনই আছেন যদিও তার সত্যিকারের বয়স
৬০ বয়সের বেশি। নূরে ছফা বুঝতে পারেন বিভিন্ন সময়ে ঢাকা থেকে যারা রবীন্দ্রনাথে খেতে
এসে নিখোজ হয়েছেন মুশকান জুবেরী তাদের শরীরের ঐ বিশেষ অঙ্গটি খাওয়ার জন্য তাদেরকে হত্যা
করেছেন।
তবে সবকিছু জানলেও
মুশকান জুবেরীকে ধরতে ব্যর্থ হন নূরে ছফা। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মুশকান
জুবেরী শুধু পালিয়েই যাননি জমিদার বাড়ির দ্বিতীয়তলায় আগুন লাগিয়ে নিজের সম্পর্কে সকল
গোপন তথ্য ধ্বংস করে দিয়ে যান।
প্রতিক্রিয়াঃ গল্পের শুরু থেকে শেষ
পর্যন্ত টান টান উত্তজেনা ছিল। কোথাও কোন অতিরিক্ত তথ্যের সমাহার ছিল না। তবে গোয়েন্দা
হিসেবে জনাব ছফাকে যথেষ্ট দক্ষ মনে হয়নি। সম্ভাবত লেখক সাহেব ছফা’র চেয়ে মুশকান জুবেরিকেই
পাঠকের ভাললাগার চরিত্র তৈরিতে মনোযোগী ছিলেন। এছাড়া কিছু বিষয় আমার ব্যক্তিগতভাবে
ভালো লাগেনি। যেমন লেখক গল্পের মধ্যে এটা প্রামাণ করতে চেয়েছেন যে মানুষের শরীরের মধ্যে
এমন একটি অঙ্গ আছে যা খেলে মানুষের যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয়। শেষের কিছুটা আগেও আমার ধারণা
ছিল হয়তো ফাইনালি এটা জানা যাবে যে আন্দিজের প্লেন ক্রাশে যে মুশকান জুবেরি মানুষের
মাংস খেয়ে বেঁছে ছিলেন আর সুন্দরপুরে যে মুশকান জুবেরী তারা দুজন আসলে ভিন্ন ব্যক্তি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
তবে সব মিলিয়ে ৫স্টার পাওয়ার মত একটি থ্রিলার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন