শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মায়া- সুষুপ্ত পাঠক

 


মায়া

বাংলায় মায়া শব্দটি একাধিক অর্থ বহন করে। অনেকে নিম্নশ্রেণির প্রাণীদের স্ত্রী প্রজাতি বোঝাতে মায়া শব্দটির ব্যবহার করেন আবার স্নেহ বা মমতা বোঝাতেও মায়া শব্দটির ব্যবহার রয়েছে। আবার শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ১৮ অধ্যায়ের ৬১ নং শ্লোকের বাংলা অর্থ: “মায়ার পুতুল যেমন মায়ায় চালিত হয়, ঈশ্বর তেমনি সকল প্রাণীর মধ্যে অবস্থান করিয়া নিজে নিজে কর্মবশে তাহাদিগকে চালাইতেছেন।” এখানে মায়া অর্থ যাদু বা রহস্যময়তা। হিন্দু ধর্মে প্রকৃতিকে মায়া বলে হয়েছে। 


একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে প্রকৃতির এই রহস্যময়তা উপলব্ধি করা যায়। সুষুপ্ত পাঠকের উপন্যাস ‘মায়া’ আমাদের প্রকৃতির এই রহস্যময়তা উপলব্ধি করতে বাধ্য করে। সত্যি বলতে কি উপন্যাসটি সাইন্স ফিকশন ঢঙে লেখা হলেও আমি গল্পের মধ্যে খুব বেশি বৈচিত্র খুঁজে পাইনি। কারণ এটা হতে পারে যে, আমি আগেও প্রচুর সাইন্স ফিকশন পড়েছি। তবে এটি কোন সায়েন্স ফিকশন নয়। লেখক নিজেও তা স্বীকার করেছেন। সাইন্স ফিকশনের আড়ালে লেখক আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন প্রকৃতির সেই রহস্যময়তার সাথে যার নাম মায়া। ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সারাদেশে ব্লগার হত্যা শুরু হয়। এই হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে অনিকেত নামে এক ব্লগার ঢাকা থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় প্রত্যন্ত গ্রামের এক নির্জন বাড়িতে। এখানে তার সাথে ঘটতে থাকে একের পর এক অলৌকিক ঘটনা। আর এই ঘটনাগুলোই পাঠকের চিন্তার জগতে নাড়া দিতে শুরু করে। দেখা যায় বিদ্যুৎ ছাড়াই তার ল্যাপটপ চালু হয়ে গেছে এবং ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। ভিন্ন কোন জগৎ বা অস্বাভাবিক কোন সত্ত্বা অনিকেতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। তারা বলতে চায়, কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম যেমন কোড লিখে তৈরি আমাদের পৃথিবীও কোন একটা সফটওয়্যারে চলছে। কম্পিউটারের মতই পৃথিবী নিজে নিজে তার বাগ রিকভার করার চেষ্টা করছে। অনিকেতের মধ্য দিয়েই সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এটা সাইন্স ফিকশনের মত কিন্তু সাইন্স ফিকশন না। আর এ কারণেই সম্ভবত লেখক অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলোর কোন সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা না দিয়ে বরং সচেতন ভাবেই রহস্যঘনিভূত করেছেন। প্রথমবার পড়ার পর আমার মনে হয়েছে লেখকের সম্পূর্ণ বক্তব্য হয়তো আমি ধরতে পারিনি তাই আবারও পড়তে হবে।  

এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে লেখক বিশ্ব জগতকে এমন এক দৃষ্টিতে দেখিয়েছেন যা এর আগে সাধারণ পাঠক দেখেনি। প্রকৃতিকে নতুনভাবে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে সম্ভবত ধর্ম ও বিজ্ঞান এর মধ্যে একটা সমন্বয়েরও চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে উপন্যাসের নামকরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। উপন্যাসটির কলেবর অহেতুক বড় করা হয়নি, ঠিক যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই বলেছেন লেখক। প্রথম উপন্যাস হিসাবে নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। ফেসবুকে ‘সুষুপ্ত পাঠক’র লেখার সাথে পরিচয় বেশ আগে থেকে। ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে তার লেখা অনেক শক্তিশালী। এই উপন্যাসেও তিনি ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছেন। তবে সুযোগ থাকার সত্বেও আক্রমণটা আরো জোরালো না করার কারণ হয়তো বইটা মৌলবাদীদের আক্রোশে নিষিদ্ধের শিকার হতে পারে এমনটা ভেবে। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন