অনেক অনেক কাল আগের কথা। এক দেশে ছিল এক স্বৈরশাসক রাজা। সেই দেশের সাম্যবাদী ছাত্রদল নামে একটা দলের সদস্যরা দেশের কিছু জনগণকে উজ্জীবিত করে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে এক বিশাল আন্দোলন গড়ে তুলল। শেষ পর্যন্ত স্বৈরশাসক পরাজিত হল। সাম্যবাদী দল তখন সে দেশের সবচেয়ে জ্ঞানী লোকটিকে সিংহাসনে বসালেন। জ্ঞানীরাজা সিংহাসনে বসেই অনেক জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বললেন। দেশের জনগণ খুব খুশি হলেন। জ্ঞানী রাজা ঘোষণা দিলেন, এখন থেকে সবাই মুক্ত। সাম্যবাদী ছাত্রদল এই ঘোষণা শুনে মহাখুশি। তারা আনন্দের অতিশায্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে হামলা, লুটপাট অগ্নিসংযোগ শুরু করে দিল। অনেক সাধারণ জনগণ বললেন, “এমন মুক্তি তো আমরা চাইনি”। জ্ঞানী রাজা তখন বললেন, “ছাত্ররা সদ্য মুক্তির স্বাদ পেয়েছে, তাই একটু ওরকম হচ্ছে। একটু সময় দেন আমি সব ঠিক করে দেবো, কারো কোন দুঃখ থাকবে না।” জনগণ আবার আশান্বিত হল।
কিছুদিন পর এক চোর ধরা পড়ল। চোর একটি মাটির বাড়ির পিছন দিয়ে সুড়ঙ্গ খনন করে ঘরের ভিতরের মালামাল নিয়ে পালানোর সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে। চোর’কে বিচারের জন্য রাজ দরবারে আনা হলো। রাজসভায় কয়েকজন সাম্যবাদী ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। যদিও চোর হাতে-নাতে ধরা পড়েছে তবুও তারা রাজাকে বললেন, ঘটনার একটা সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। জ্ঞানী রাজা তখন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিলেন। কিছুদিন পর তদন্ত কমিটি রাজার সাথে দেখা করলেন। তারা রাজা’কে বললেন, মহারাজ, প্রথমত এই চোর সাম্যবাদী ছাত্রদলের একজন সদস্যের খালাতো ভাই। বিগত স্বৈরশাসকের সময়ে চোরদের যে সিন্ডিকেট ছিল তার কারণে সে তখন চুরি করতে পারিনী। সেই সময়ে সে খুব কষ্টে দিনযাপন করেছে। দীর্ঘদিন চুরি করতে না পারায় তার চৌর্য প্রতিভা অন্যদের তুলনায় ডেভেলপ করতে পারিনী। এ কারণেই সে ধরা খেয়েছে। ধরা খাওয়ার পর তাকে যথেষ্ঠ উত্তম-মাধ্যম দেওয়া হয়েছে। তাকে আর নতুন করে শাস্তির আওতায় আনা ঠিক হবে না। তাছাড়া চোর যে লোকের বাড়িতে চুরির চেষ্টা করেছিল সেই লোক স্বৈরশাসক রাজার একজন সমর্থক ছিলেন। রাজার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তিনি একটি সুন্দর মাটির বাড়ি তৈরি করেছিলেন। ঐ লোক কিভাবে এত সুন্দর বাড়ি তৈরির অর্থ পেলো তা নিয়ে নতুন করে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। শুরু হলো তদন্ত। কিন্তু তদন্তে বাড়ির মালিকের কোন দোষ খুজে পাওয়া গেল না।
জ্ঞানী রাজা অনেক চিন্তা-ভাবনা করলেন এবং তারপর বাড়ির মালিক’কে রাজদরবারে ডেকে পাঠালেন। দেশের সকল গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাংবাদিক প্রভৃতিগণ রাজদরবারে উপস্থিত হলেন বিচার দেখার উদ্দেশ্যে। জ্ঞানীরাজা বললেন- সম্প্রতি একটি বাড়িতে যে চুরির চেষ্টা হয়েছে তাতে আমি একটি ঐতিহাসিক রায় দিতে যাচ্ছি। আমার বিচারে এই সম্পূর্ণ ঘটনায় প্রধান আসামী বাড়ির মালিক। কারণ, বাড়ির মালিকের কাছে যথেষ্ট অর্থ থাকার পরেও সে পাকা বাড়ি তৈরি না করে মাটির বাড়ি তৈরি করেছিল। এখন ভাবুন, চোর যখন সুড়ঙ্গের মধ্যে ছিল তখন যদি মাটির দেয়াল তার শরীরের উপর ভেঙ্গে পড়ত তাহলে তার অবস্থা কি হতো ! ! ! চোরটা তো ঘটনাস্থলেই মারা যেত ! এটা তো জেনেশুনেই মানুষ হত্যার ফাঁদ তৈরি করে রাখার সামিল! তাই বাড়ির মালিকই এই মামলার প্রধান আসামী এবং শাস্তির যোগ্য!
রাজসভা হতভম্ব ! কেউ কোন কথা বলছে না। সাম্যবাদী ছাত্রদলের কেউ কেউ বলে উঠলেন, না না এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই লোক’কে এখনই বন্দি করা হোক।
অত:পর বাড়ির মালিক’কে বন্দি করে কারাগারে পাঠানো হলো এবং তার সমস্ত সম্পদ সেই চোরকে দিয়ে দেওয়া হলো। অনেকেই জ্ঞানী রাজার এই অভিনব বিচারের প্রশংসা করতে করতে রাজসভা ত্যাগ করলেন। কেউ কেউ মৌনবলম্বন করে রইলেন। এরমধ্যে একটু বোকাগোছের এক লোক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, “বিচারটা বোধ হয় ঠিকঠাক হলো না”। তখন একজন সাম্যবাদী ছাত্র চিৎকার করে তাকে বললেন, এই যে আপনি স্বাধীনভাবে মহারাজের করা বিচারের বিরুদ্ধে মতামত দিলেন, এই স্বাধীনতা কি আগে ছিল? বোকা লোকটি স্বীকার করে নিল যে, এই স্বাধীনতা আগে ছিল না।
সকলে তখন ধন্য ধন্য করতে লাগলেন।
Disclaimer: গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে বিন্দুমাত্র মিল খুঁজে পেলে তা কাকতলীয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন